দূরের দুরবিনে

একটি সেতুর গল্প

অজয় দাশগুপ্ত | শুক্রবার , ৩ জুন, ২০২২ at ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ

শুরুতে ধান ভানতে শীবের গীত গাইতেই হয়। খেয়াল করবেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত সরব হচ্ছেন আবারো। আমাদের দেশে রাজনীতি যতদিন পরনির্ভর আর অগণতান্ত্রিক থাকবে ততোদিন তারা নাক গলাবে। এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলছেন আমেরিকা আমাদের দেশে একটি সুষ্ঠু ভোট চায়। এ ইচ্ছাকে আমরা অসম্মান করি না। কিন্তু তিনি কে বলার ? আমরা যদি তাঁকে বলি আপনার মুল্লুকে আমরা শিশুদের জীবনের নিরাপত্তা চাই? আমরা ও এটা বলতে পারি। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এমন আমরা বললেও কিছু হবে না। আর তারা বললে আমাদের রাজনীতির একাংশ নড়ে চড়ে বসে আরেক অংশ দারুণ খুশী হয়। কারণ আমাদের দেশে গণতন্ত্র খাতা কলমে থাকলেও বাস্তবে নাই। ভোট ও ভোটাধিকার আছে প্রশ্নের মুখে। এবারের নির্বাচন জবাবদিহিতামূলক হতে হবে। মনে হচ্ছে এবার বিএনপিও ছাড় দেবে না। এটা মানতেই হবে বারবার প্রশাসন বা বাহিনী দিয়ে জয়ী হ ওয়া যায় না। অথচ আওয়ামী লীগের আমলে যে পরিমাণ উন্নয়ন ও ভালো কাজ হয়েছে তা একটি দলের ভোটে জেতার জন্য যথেষ্ট। তাদের গত তিনবারের শাসনে নানা ধরণের অপচেষ্টা দমন আর দেশকে উন্নত করার কাহিনী একদিন আলোচিত হবেই। কিন্তু পাশপাশি কেবল ভোটের ভয়ে আর জুজুর ডরে তারা যে আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে তারও একটা হিসাব কালের গর্ভে জমা থাকবে বৈকি। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একা এই দেশের হাল ধরে আছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। নখ দর্পণে ইতিহাস। ইতিহাস শুদ্ধিকরণের পর পর তিনি দেশ উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেন। আজ যা ফলবতী এক বৃক্ষ। তারপরও ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভয়ের কারণ তাদের অপরিপক্ব নেতার দল। তাদের কথাবার্তা। অথচ তারা এক কথাতেই মীর্জা ফখরুলদের পদ্মাসেতুর রাজনীতি শেষ করে দিতে পারতেন যদি বলতেন যাবেন কোথায়? ওপরে সেতু নীচে তো নৌকা। যে দিকে পা বাড়াবেন সেদিকেই আমরা। এই সেতু নিয়ে কত কথা কত গল্প।

শেষতক পদ্মা সেতুর নাম পদ্মা সেতুই বহাল রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে এ কারণেই পছন্দ করি। একটি সেতু নির্মাণ আর তা নিয়ে যে হট্টগোল তা কেবল আমাদের দেশেই সম্ভব। দুনিয়ার বহুদেশে এর চাইতে বড় বড় সেতু আছে। আসমের ভূপেন হাজারিকা সেতুটিও এমন এক দীর্ঘ সেতু। কিন্তু এমন মারকাট মনোভাব আর কথা বিতর্ক নাই কোথাও। প্রধানমন্ত্রী সোজা সাপটা বলেন বলে অনেকের তা পছন্দ হয় না। কিন্তু এটাও মানতে হবে প্রক্রিয়ার শুরু থেকে দেশে বিদেশে যে ষড়যন্ত্র আর যতো অভিযোগ সেগুলো থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করার মতো কারণ দেখাতে না পারলে বড় বড় মানুষগুলোর বিরুদ্ধে রাগ বা অভিযোগ ও বিলীন হবে না। প্রথমত দেশ ও দশের মঙ্গলে বাধা দেয়া বা সে কাজ স্থগিত করার অপচেষ্টা কেউ মানবে না। অত:পর লবিং বা নিজের প্রভাব খাটানো। ড. ইউনুস একজন সম্মানিত মানুষ। আমাদের ভূখণ্ডে একমাত্র নোবেল পাওয়া ব্যক্তি। তাঁর অপমান বা তাঁর বিরুদ্ধে কিছু শুনলে খারাপ লাগে বৈকি। কিন্তু তাঁরও দায়িত্ব আছে নিজের অবস্থান আর ভূমিকা পরিষ্কার করে আত্মপক্ষ সমর্থনের।

খালেদা জিয়া কিংবা মীর্জা ফখরুলদের কথা ভিন্ন। তাঁরা কখন কি বলেন কেন বলেন অনেক সময় নিজেরাই জানেন না। আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির নেতারা লাগামহীন কথা বলেন। রাজনীতি ও তাঁদের কথাবার্তা দেশের সমস্যাকে বাড়ানোর বাইরে আর কিছু করেছে বলে চোখে পড়ে না। অনায়াসে এ জায়গাগুলো ঠিক করা গেলেও কারো সেদিকে নজর নাই। খালি কথায় কি আর পেট ভরে? এখন মানুষ চোখে দেখছে এই সেতু। অনায়াসে জানা গেছে বোঝা যাচ্ছে অচিরেই মানুষের কলকাকলীতে ভরে উঠবে সেতুর যাত্রাপথ। তখন এদের মুখ দেখানোর জো থাকবে ? সেটা থাক বা না থাক এমন রাজনীতি আমাদের নিয়তি। আগামীকাল আওয়ামী লীগ কোন কারণে বিরোধী দলে গেলে তারাও এক ভাষায় কথা বলবেন।

মূল বিষয়, আমাদের জনগণের ভার লাঘব। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। এক একটি এলাকার সাথে আর একটি এলাকা বা অঞ্চল যুক্ত করার অন্তরায় নদী। এসব বিশাল বিশাল নদীকে সংযুক্ত করার যে দু:সাধ্য কাজ করা হচ্ছে তা প্রশংসনীয় । আমি দৃ্‌ঢ় ভাবে বলব এই কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের কথা লিখা থাকবে ইতিহাসে । তবে সবকিছু ছাপিয়ে সেতুর নামটি নিয়ে যে তৈল মর্দন আর স্তাবকতা তাকে তুড়ি মেরে উড়ুদেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। আজকাল এই এক রোগ। বুঝে না বুজে স্বার্থপরের দল খালি তোষামোদী করে। এসব তোষামোদীতে তারা বাগিয়ে নেয় টাকা পয়সা। কারো লোভ পদ পদকে। কিন্তু সব সময় তা কাজ করে না। এই ঘটনা অর্থাৎ পদ্মা সেতুর নামাকরণ নিয়ে যে মোসাহেবি তা ব্যর্থ করে দিয়ে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি অনেক কিছু জানেন না। আর জানলে সে তেল বা ঘিয়ে কাজ হয় না। এটাই তাঁর বৈশিষ্ট্য।

গোড়াতে যে কথা বলছিলাম সেতুর নাম যাই হোক এ কাজের জন্য আজীবন বেঁচে থাকবেন তিনি। কারণ তিনি যদি দৃঢ় না হতেন বা হাল না ধরতেন সম্ভব হতো না এই কর্মকাণ্ড। পদে পদে বাধা আর কটুক্তি পেরিয়ে তিনি যা করলেন তাতে ঐ কবিতাটির কথা মনে পড়ে।

নদী নাহি পান করে কভু তার জল/ তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল

দেশের নেত্রী দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া সে কবিতার ই প্রতিধ্বনি করলেন এই নাম ঠিক করে দিয়ে । আমরা অপেক্ষা করছি এই প্রমত্ত পদ্মার ওপর ভাসমান সেতুর উদ্বোধন আর যাতায়াত দেখার জন্য। সোনার বাংলা তোমায় ভালোবাসি কথাটা দেশপ্রেমের শক্তি হলে আর কোন বিতর্ক না তোলাই হবে কাজের কাজ। একটি সেতু ও তার নাম আজীবন অমর থাকুক বাংলাদেশের হৃদয়ে। এই সেতু নীরবে দাঁড়িবে দেখবে মহাকালের কাছে প্রশ্ন রাখবে আমি কি পারাপারে হিন্দু মুসলমান আওয়ামী লীগ বা বিএনপি জামাত বিবেচনা করেছি ? কোন সেতুই তা করে না। করে মানুষ। স্বার্থপর দলবাজি। দুর্ভাগ্য আমরা তার শিকার। আর সৌভাগ্য আমাদের জীবদ্দশায় শেখ হাসিনার কারণে এমন যুগান্তকারী একটি কাজ দেখে যেতে পারলাম। বাংলাদেশের জয় এভাবেই দৃশ্যমান হোক ।

লেখক : সিডনি প্রবাসী প্রাবন্ধিক, কবি ও কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ২২.৯৫ কোটি টাকা