ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

কথিত চীনা ঋণের ফাঁদে পড়বে না বাংলাদেশ তবে সাবধান থাকা ভালো
‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ কথাটি এখন উন্নয়ন ডিসকোর্সে একটি বহুল প্রচলিত অভিযোগ। বলা হচ্ছে, চীন তার বিশ্ব-আধিপত্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রধানত মহাসড়ক, রেলপথ, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট, খনিজ আহরণ প্রকল্প, ইত্যাদি ভৌত অবকাঠামোতে সহজ শর্তে যে বিপুল ঋণ প্রদান করছে তাতে বেশিরভাগ দেশ প্রলুব্ধ হয়ে এমনসব প্রকল্পে এই ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করছে যেগুলোর ‘ইকনমিক ফিজিবিলিটি’ নড়বড়ে হওয়ায় প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পর ঐসব প্রকল্পের আয় থেকে সুদাসলে চৈনিক ঋণ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ফলে, এসব দেশ একের পর এক চৈনিক ঋণের ফাঁদে আষ্টেপৃষ্টে আটকা পড়ে ঐ প্রকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদী কর্তৃত্ব চীনকে অর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছে, অথবা চীনকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব-বিরোধী নানা সুবিধা দিতে বাধ্য হচ্ছে। আসলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যাধীন বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবি, এএফডিবি, সিডিবি ও আইডিবি এর মত আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর উন্নয়ন-অর্থায়নের আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে চীনা-ঋণে অর্থায়িত ভৌত অবকাঠামো প্রকল্পগুলো সাম্প্রতিক কালে অনেক উন্নয়নশীল দেশের সরকারের কাছে খুবই আদরণীয় হয়ে উঠেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোর ভূরাজনৈতিক প্রাধান্যকে মোকাবেলার জন্যে ভাল চৈনিক-হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। অতএব, ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ সম্পর্কীয় প্রচার-প্রোপাগান্ডা মার্কিনপন্থী ভূরাজনৈতিক কৌশলের প্রধান অস্ত্র হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে বলা চলে। পাকিস্তানের চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর (সিপেক বা সিপিইসি) ও গোয়াদার গভীর সমুদ্রবন্দর, শ্রীলংকার হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর ও কলম্বো চাইনিজ সিটি, মালদ্বীপের আন্তঃদ্বীপ যোগাযোগ সেতু, মিয়ানমারের কিয়াকফ্যু গভীর সমুদ্রবন্দর ও তেল-গ্যাস পাইপলাইন–এগুলো চীনা ঋণের ফাঁদের উদাহরণ হিসেবে ইদানীং প্রোপাগান্ডা-যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষত, বন্দর-ব্যবহার বাড়াতে ব্যর্থ হয়ে শ্রীলংকা হাম্বানটোটা বন্দরকে চীনের কাছে ৯৯ বছরের জন্যে ইজারা দিতে বাধ্য হওয়ায় ব্যাপারটিকে ‘ফাঁদ’ হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যাচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরের ব্যবহারও তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না, এবং সিপেকের সুবিধা নিয়ে চীন থেকে গোয়াদার বন্দর পর্যন্ত নির্মীত দীর্ঘ মহাসড়কের আশপাশে শিল্পায়নের মহাযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে বলে যে আশাবাদ পাকিস্তানে সৃষ্টি হয়েছিল তারও কোন হদিশ মিলছে না। লাওস, জিবুতি, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, কিরগিস্তান এবং তাজিকিস্তানও তাদের নানা প্রকল্পের কারণে চীনা ঋণের ফাঁদে আটকে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কথিত চীনা ঋণের ফাঁদে ক্রমেই জড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–এ ধরনের প্রচার-প্রোপাগান্ডা প্রধানত ভারতীয় মিডিয়ায় সাম্প্রতিককালে ঘন ঘন পরিবেশিত হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে বহুল আলোচিত প্রায় এক বিলিয়ন ডলার প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীনের অর্থায়নের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে এহেন ভারতীয় প্রচার-প্রোপাগান্ডা তুঙ্গে উঠেছে। (এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি বাংলাদেশের অনুরোধে সম্পন্ন করেছে চীন)। বিশেষত, বাংলাদেশ কর্তৃক চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর চীন বাংলাদেশকে ঋণের পর ঋণ দিয়ে ভারত থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে বলে প্রচার-প্রচারণা অনেকখানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে ভারতের অন্যায্য শর্ত-কন্টকিত ‘লাইন অব ক্রেডিট’ বাংলাদেশের জন্যে বহুদিন আগেই গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছিল। প্রকল্পের ঠিকাদার, পরামর্শক ও যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে ইট-বালু-সিমেন্টের মত নির্মাণ সামগ্রী পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানি করার বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে প্রতিটি ভারতীয় ঋণে অর্থায়িত প্রকল্পে, যার ফলে এই ঋণগুলোকে নিকৃষ্ট ‘টাইড এইড’ এর ক্লাসিক নজির আখ্যায়িত করাই সমীচীন। অনেকগুলো প্রকল্পে ভারতের ঠিকাদার ও পরামর্শকদের খামখেয়ালিপনার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ, রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প এর উদাহরণ। এতসব শর্তের বেড়াজাল মেনে নিয়ে ভারত থেকে ‘সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট’ নেয়া বাংলাদেশের জন্যে অপমানজনক এবং স্বার্থবিরোধী বিবেচিত হওয়ায় চট্টগ্রাম বে টার্মিনালে ভারতীয় অর্থায়ন প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশ চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে চার লেনের সড়ক-টানেল নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন করে এনেছে, যেটা দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশের টানেল হতে যাচ্ছে। এটাও ভারতীয়দের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছে। এই টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর ও শিল্প এলাকা এবং চট্টগ্রাম নগর কর্ণফুলি নদীর উভয় তীরে সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে সাগরতীর বরাবর যে ১৮০ মাইলের মেরিন ড্রাইভ মহাসড়ক কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রকল্প গৃহীত হতে যাচ্ছে সেটা এই টানেলের মাধ্যমেই যুক্ত হবে। এই মেরিন ড্রাইভের কারণে সাগর-উপকূলে যে সুদীর্ঘ শিল্প-করিডর গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে সেটা বাংলাদেশকে একটি যুগান্তকারী শিল্পায়ন-যজ্ঞে নিয়ে যাবে।
পশ্চিমা এবং ভারতীয় মিডিয়ায় চীনের ‘ঋণ ফাঁদ’ নিয়ে প্রোপাগান্ডা ২০১৬ সালে গণচীন কর্তৃক ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই) বা ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবোর) ঘোষণার পর থেকে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিশেষত, ভারতে নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভারত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি বিসিআইএম (বাংলাদেশ চায়না ইন্ডিয়া মিয়ানমার) ইকনমিক করিডর পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভারত-চীনের বৈরিতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অনেকেই হয়তো এদ্দিনে ভুলে গেছেন যে ভারতের কংগ্রেস সরকার অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ২০০৬ সালে ‘বিসিআইএম ইকনমিক করিডর’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যার আরেক নাম ‘কুনমিং ইনিশিয়েটিভ’। ঐ চুক্তির অধীনেই চীনের কুনমিং থেকে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ হয়ে বাংলাদেশের সিলেটের ভেতর দিয়ে ঢুকে ঢাকা হয়ে ভারতের কোলকাতা নগরী পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। ঐ কানেকটিভিটির পরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশ পদ্মা সেতু স্থাপন করতে গিয়ে যখন বিশ্ব ব্যাংকের চরম শত্রুতা এবং ব্ল্যাকমেইলের কারণে ২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক-এডিবি-জাইকা-আইডিবি এর ঋণের পরিবর্তে নিজস্ব অর্থায়নে ঐ সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল তখন চীনা কোম্পানিগুলোকে পরবর্তীতে পদ্মা সেতুর ঠিকাদার নিযুক্ত করেছে বাংলাদেশ। অতএব, পদ্মা সেতুকে ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ আখ্যায়িত করা একেবারেই ভিত্তিহীন মিথ্যাচার। পদ্মা সেতু বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব-অর্থায়িত প্রকল্প, এখানে কোন চীনা ঋণ নেই। আবার, ঐ ‘কুনমিং ইনিশিয়েটিভ’ চুক্তির অধীনেই বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-গুনধুম রেলপথ স্থাপন করে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং নগরীর সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। ২০১২ সালে যখন চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও তদানীন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাঁকে সোনাদিয়া প্রকল্পে চীনের অর্থায়নের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। অনুরোধের ‘ফলো-আপ’ হিসেবে ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় যখন দু’দেশের মধ্যে ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ স্বাক্ষরের ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়েছিল তখন ভারতে সদ্য-ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শেষ মুহূর্তের সরাসরি চাপে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প থেকে সরে আসতে বাংলাদেশকে বাধ্য করা হয়েছিল । নরেন্দ্র মোদীর ভেটোর কারণ ছিল তাঁর শাসনামলে ভারত বঙ্গোপসাগরে চীনকে সহজ প্রবেশাধিকার দিতে নারাজ। ফলে, ভারত ও চীনের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার শিকার হয়ে বাংলাদেশ সোনাদিয়ার মত ‘গভীর প্রাকৃতিক খাঁড়ির’ সুবিধাসম্পন্ন স্থানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ‘আল্লাহ-প্রদত্ত নেয়ামত’ থেকে বঞ্চিত হলো। আমাদের ভাগ্য ভাল যে এখন জাপানের অর্থায়নে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সুযোগ পেয়ে গেছি আমরা, যে বন্দরটি অরিজিনালি হওয়ার কথা ছিল মাতারবাড়িতে নির্মীয়মান বেশ কয়েকটি কয়লা-তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানির বন্দর।
ঋণের ফাঁদের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে রাশিয়ার ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণের অর্থে নির্মীয়মান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসা উচিত। প্রায় এক লক্ষ তের হাজার বিরান্নব্বই কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাত্র ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই নির্মীয়মান প্ল্যান্ট প্রকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে কখনোই ‘ফিজিবল’ প্রমাণ করা যাবে না, কারণ ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেকগুলো বিকল্প প্রযুক্তি বিশ্বে পাওয়া যাবে যেখানে এর অর্ধেকেরও কম ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রকল্পে ঐ পরিমাণ বিদ্যুৎ অনেক বেশি নিরাপদে উৎপাদন করা যাবে। ঋণ পাওয়া গেলেই পারমাণবিক প্রকল্পের মত একটা মহাবিপজ্জনক প্ল্যান্ট বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের সীমানার একেবারে মাঝখানে পাবনার রূপপুরে স্থাপন কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? বলা হচ্ছে, প্রকল্প চালু হওয়ার ২০ বছরের মধ্যেই রাশিয়ার ঋণ সুদাসলে শোধ হয়ে যাবে। রাশিয়ার রোসাটম নামের যে প্রতিষ্ঠানটি এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে তারা প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে আনুমানিক ৬০ বছর আয়ু হবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এক বছর রোসাটম প্ল্যান্টটি পরিচালনা করবে। খুবই উদ্বেগজনক হলো, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার যখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০০ কোটি ডলার থেকে ৪০০ কোটি ডলার। তার মানে শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় প্রাক্কলিত ১৩৫০ কোটি ডলারের চাইতেও অনেক বেশি হবে হয়তোবা। কিন্তু, ব্যয় আর না বাড়লেও ‘গরীবের এই ঘোড়ারোগ’ কখনোই প্রশংসনীয় বিবেচিত হবে না। শোনা যাচ্ছে চীনের অর্থায়নে পটুয়াখালিতে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়াধীন! দ্বিতীয় যে কম প্রয়োজনীয় প্রকল্পের উল্লেখ করবো সেটা হলো চীনা ঋণে অর্থায়িত ঢাকা-ফরিদপুর-যশোর রেললাইন। পদ্মাসেতু দিয়ে মহাসড়কের মাধ্যমে ঢাকার সাথে দক্ষিনবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই রেললাইন অনেকখানি অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে। অথচ, প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে! যমুনা রেলসেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে বর্তমান বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর রেলপথের সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে। আরেকটি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দুই-তৃতীয়াংশ ক্যাপাসিটি এখনো অব্যবহৃত রয়ে গেছে। আমরা নিজেরাও ব্যবহার করতে পারছি না, অন্য কোন দেশের কাছে এই স্যাটেলাইটের উদ্বৃত্ত ক্যাপাসিটি বিক্রয়ও করতে পারছি না। অথচ, এখন কৃষিখাতে ব্যবহারের অজুহাত দিয়ে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তোড়জোর শুরু হয়ে গেল! সাম্প্রতিককালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কঙবাজার পর্যন্ত একটি ‘বুলেট ট্রেন’ চালুর প্রকল্প-প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। আমার বিবেচনায় এটিও আরেকটি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হতে যাচ্ছে। এ-ধরনের ব্যয়বহুল অথচ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের মোহে ডুবতে থাকলে বাংলাদেশও একসময় ‘ঋণের ফাঁদে’ আটকে যাবে। সাধু সাবধান!
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজকাল
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের নদীসম্পদ