ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ২১ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ বিশাল সেনাবাহিনীর অসহনীয় বোঝা বাংলাদেশকে বইতে হয় না

সম্প্রতি পাকিস্তানে ন্যাশনাল এসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে। এসেম্বলির ৩৪২ জন সদস্যের মধ্যে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ দলের ১৫৫ সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানের সেনা এস্টাবলিশমেন্টের গোপন মদদে কয়েকটি ছোটখাট দলের সাথে কোয়ালিশন করে ২০১৮ সালে ইমরান খান এসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। এবার সেনাবাহিনী প্রধানের গোপন সমর্থন হারিয়ে ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হলেন, কারণ ঐ দলগুলো সেনা এস্টাবলিশমেন্টের ইশারায় বিরোধীজোটের সাথে যোগ দিয়ে নো-কনফিডেন্স মোশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

ইমরান খান তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি অভিযুক্ত করলেও সারা বিশ্বই বুঝতে পেরেছে যে সেনা এস্টাবলিশমেন্টের সাথে তাঁর চলমান বিরোধের কারণেই এই ‘ঘোড়া বদল’ ঘটেছে। ১৯৪৮ সাল থেকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রকৃত মালিক ঐ দেশের সেনাবাহিনী, গত ৭৪ বছরেও এই বাস্তবতার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আর, পাকিস্তানের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান দুর্দশার পেছনেও প্রধান কারণ বিশাল এই সেনাবাহিনী পালনের অসহনীয় বোঝা।
পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীতে প্রায় পৌনে সাত লক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী-সিপাহী রয়েছে, যার মধ্যে সেনাবাহিনীতেই রয়েছে সাড়ে পাঁচ লক্ষের বেশি।

আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এত বিশাল একটি সশস্ত্র বাহিনীকে সাজাতে গিয়ে এবং সেটাকে যুদ্ধের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখতে গিয়ে প্রতি বছর পাকিস্তানের সরকারী বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি ব্যয়বরাদ্দ প্রয়োজন হয়ে পড়ে, যার ফলে বাজেটের অন্যান্য খাতে সরকারী ব্যয়বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় নেহাতই অকিঞ্চিৎকর বলা চলে। বিশেষত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে পাকিস্তান সরকারী ব্যয়বরাদ্দ বাড়াতেই পারছে না প্রতিরক্ষা খাতের খাই মেটাতে গিয়ে। প্রতিরক্ষা খাতে দেশটি জিডিপি’র পাঁচ শতাংশ বা তারও বেশি ব্যয় করে যাচ্ছে, এবং এই খাতে অপ্রকাশ্য/গোপনীয় ব্যয় বিবেচনায় নিলে অনুপাতটা আরো বেশি হবে। অনস্বীকার্য সত্য হলো, সেনাবাহিনী পুরো পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং দেশটির অর্থনীতিকে অজগর সাপের মত গিলে খাচ্ছে। ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তানের সেনা এস্টাবলিশমেন্ট যেহেতু ঐ দেশটির প্রকৃত শাসনক্ষমতা দখল করে রেখেছে তাই প্রতিরক্ষা খাতের ব্যয়বরাদ্দ কাটছাঁটের ইস্যুটিকে আলোচনা-সমালোচনায় নিষিদ্ধ বিষয় (taboo) বিবেচনা করা হয় ওখানে। অদূর ভবিষ্যতেও প্রকৃত শাসনক্ষমতা থেকে সেনাবাহিনীকে হটানো পাকিস্তানে দিবাস্বপ্নই থেকে যাবে। পাকিস্তান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৌড়ে কেন ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে সে প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে ওয়াকিবহাল মহল পর্যন্ত ঐ দেশের দুর্নীতির প্রকোপ, অর্থনৈতিক কৌশলের দুর্বলতা, নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা এবং সরকারগুলোর অযোগ্যতাকে প্রায়শ দায়ী করলেও সামরিক বাহিনীর পেছনে এই মাত্রাতিরিক্ত এবং অসহনীয় সরকারী ব্যয়ের ব্যাপারটিকে সাধারণত এড়িয়ে যায় অথবা প্রকাশ্যে এ-ব্যাপারে মন্তব্য করাকে বিপজ্জনক বিবেচনা করে। ইমরান খানও সযত্নে এই ইস্যুটা এড়িয়ে যেতেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদ্দিন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ‘সাদা হাতি’ পোষার অসহনীয় বোঝা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না তদ্দিন অনুন্নয়নের দুষ্টচক্র থেকে দেশটির মুক্তি মিলবে না। একইসাথে, রাষ্ট্রটিও সেনা এস্টাবলিশমেন্টের ডি-ফেক্টো শাসন থেকে মুক্তি পাবে না।

পাকিস্তান ২০২২ সালে এসে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চাইতে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে, অথচ ১৯৭১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তারা বেশিরভাগ অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের চাইতে অগ্রগামী ছিল। ১৯৭১ সালে মাথাপিছু জিডিপি’র বিচারে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান থেকে ৭০ শতাংশ এগিয়ে ছিল, কিন্তু ২০২১ সালের জুনে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯১ ডলারে, আর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক পাকিস্তানের মাথাপিছু জিএনআই মাত্র ১৫৪৭ ডলার। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৪ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তানীরা তদানীন্তন পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তানকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে শোষণ ও লুন্ঠন করেছে এবং অপরিসীম বঞ্চনার শিকার করেছে। সেজন্য ১৯৪৭ সালে যদিও পূর্ব বাংলা অর্থনৈতিকভাবে পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলচিস্তানের তুলনায় বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল কিন্তু ২৪ বছরের ঐ নব্য-ঔপনিবেশিক পর্বের শেষে এসে পাঞ্জাব এবং করাচী অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানের চাইতে অনেকখানি সমৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিচের আলোচনা থেকে এই শোষণ, লুন্ঠন, বঞ্চনা ও পুঁজিপাচারের চিত্রটা কিঞ্চিৎ পাওয়া যাবে:
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের শাসকদের সাথে বাঙালিদের প্রথম প্রকাশ্য বিরোধটা শুরু হলেও এর আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যেকটা অর্থনৈতিক নীতিতে পূর্ব বাংলার ন্যায্য হিস্যা না দেওয়ার সংঘবদ্ধ প্রয়াসটা দৃষ্টিকটুভাবে ধরা পড়ে যাচ্ছিল বারবার। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে যাওয়া প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধের জন্যে পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল প্রথম থেকেই। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল রাজধানী করাচীতে সরকারের দফতরগুলোর ইমারত নির্মাণ, সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা স্থাপনের জরুরী প্রয়োজন এবং মোহাজেরদের পুনর্বাসনের জন্যে বিপুল ব্যয়ের ইস্যুগুলো। এভাবে যে বঞ্চনার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং নীতি-বাস্তবায়ন শুরু হলো তা শেষ হয়নি পাকিস্তানের পুরো ২৪ বছরে। পাকিস্তানের প্রথম আদমশুমারী হয় ১৯৫১ সালে। ঐ আদমশুমারীতে পাকিস্তানের জনসংখ্যা নির্ণীত হয় ৭.৫৮ কোটি, যার মধ্যে ৪.২০ কোটি ছিল পূর্ব বাংলার জনসংখ্যা, মানে ৫৫.৪১ শতাংশ। (১৯৫৫ সালে পূর্ব বাংলার পরিবর্তিত নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান)। ঐ জনসংখ্যার আনুপাতিক ন্যায্য হিস্যা কোন ব্যাপারেই পূর্ব পাকিস্তান ২৪ বছরে কখনোই পায়নি, এমনকি অর্ধেকও পায়নি। নিচের তথ্যগুলো দেখুন:

১) প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানের রপ্তানী আয়ের ৭৫-৭৭ শতাংশই আসত পূর্ব বাংলার রপ্তানী আইটেমগুলো থেকে। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত কোরিয়া যুদ্ধ এবং প্রথম ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে পূর্ব বাংলার পাট রপ্তাানী আয়ে একটা জোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় ঐ অনুপাত ৮০-৮৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। অথচ, ঐ রপ্তানী আয়ের প্রায় পুরোটাই ১৯৪৭-৪৮ অর্থ-বছর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার দখলে নিতে শুরু করেছিল। ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন যখন জোরদার হতে শুরু করেছিল তখন বৈদেশিক রপ্তানী আয়ের একটা ক্রমবর্ধমান অংশ পূর্ব পকিস্তানে বরাদ্দ করা হলেও ১৯৪৭-১৯৭১ এই ২৪ বছরের শেষে এসেও কখনোই বছরে রপ্তানী আয়ের এক-পঞ্চমাংশও পূর্ব পাকিস্তান নিজেদের ভাগে পায়নি, এই ২৪ বছরের গড় বার্ষিক হিস্যা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ।
২) ইঙ্গ-মার্কিন বলয়ে অবস্থান গ্রহণের কারণে পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন দাতাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান পাওয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার পেয়েছিল। ২৪ বছরে ঐ ‘বৈদেশিক সাহায্যে’র মাত্র ১৭ শতাংশ পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান, এটা ওসব দাতাদেশ ও সংস্থার হিসাব মোতাবেকই প্রমাণিত হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর ঐ ১৭ শতাংশ ঋণের দায়ভার বাংলাদেশ গ্রহণ করার পরই কেবল ওসব দাতারা নতুন করে বাংলাদেশকে ঋণ এবং অনুদান দিতে রাজি হয়েছিল।
৩) পূর্ব পাকিস্তান থেকে ২৪ বছরে পাকিস্তানের ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছিল তার মাত্র ৮ শতাংশ বাংলাদেশের ঋণ গ্রহীতারা পেয়েছে, বাকি ৯২ শতাংশই পাকিস্তানের সরকার এবং শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা কব্জা করে নিয়েছে।
৪) ঐ ২৪ বছরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারী বাজেটের মাত্র ২৮ শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয়িত হয়েছিল, বাকি ৭২ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে।
৫) ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত পাকিস্তানের তিনটি পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যয়বরাদ্দের মাত্র ২৯ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে।
৬) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোতে পূর্ব পাকিস্তানীদের অনুপাত কখনোই ৭ শতাংশ অতিক্রম করেনি। অফিসারদের মধ্যে বাঙালিদের অনুপাত এমনকি পাঁচ শতাংশেও পৌঁছায়নি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
৭) ১৯৭০ সালে খোদ পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত প্রাইভেট খাতের শিল্প-কারখানার মাত্র ১১ শতাংশের মালিক ছিল বাঙালিরা, বাকী ৮৯ শতাংশের মালিক ছিল হয় পশ্চিম পাকিস্তানীরা নয়তো অবাঙালিরা। পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত একটি শিল্প-কারখানার মালিকও বাঙালি ছিল না।
৮) মুক্তিযুদ্ধের সময় ডিসেম্বর মাসে যখন পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সকল ব্যাংকের ভল্ট খালি করে অর্থ পাচার করে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানে। এমনকি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের রিজার্ভের সকল সোনাদানা এবং বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানে।
৯) ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সিভিল প্রশাসনে বাঙালি ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ, আর বাকি ৮৪ শতাংশই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী এবং অবাঙালিরা।
১০) যখন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন পূর্ব পাকিস্তানে থাকা নৌবাহিনীর জাহাজ, বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের একাংশ এবং পিআইএ’র বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ বার্মার সহায়তায় পাকিস্তানে নিয়ে যেতে পেরেছিল পাকিস্তান সরকার।
১১) পাকিস্তানের তিনটা রাজধানী করাচী, রাওয়ালপিন্ডি এবং ইসলামাবাদের নির্মাণব্যয়ের সিংহভাগই বহন করেছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালে বাংলাদেশ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। তুলনাটা দেখুন:
১) মাথাপিছু জিডিপি’তে বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় ৬০ শতাংশ এগিয়ে গেছে।
২) বাংলাদেশের রপ্তানী আয় পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি, ২০২১-২২ অর্থ-বছরে তা ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
৩) বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, কিঞ্চিৎ হ্রাস পেয়ে ২০২২ সালের এপ্রিলে রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ালেও সেটা পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি।
৪) বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ৭২.৮ বছর, পাকিস্তানের ৬৬ বছর।
৫) বাংলাদেশের জনগণের সাক্ষরতার হার ৭৬ শতাংশ, আর পাকিস্তানের ৫৯ শতাংশ।
৬) মানব উন্নয়ন সূচকের কান্ট্রি-র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩ নম্বরে, আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৭ নম্বরে।
৭) বাংলাদেশের মোট জিডিপি ৪১৬ বিলিয়ন ডলার, আর পাকিস্তানের ২৬৬ বিলিয়ন ডলার।
৮) বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২ শতাংশ, আর পাকিস্তানের ২.১ শতাংশ। ফলে, পাকিস্তানের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটিতে, আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটির মত। বাংলাদেশের টোটাল ফার্টিলিটি রেট কমে বর্তমানে ২.১ হয়ে গেছে, অথচ পাকিস্তানে তা এখনো ৩.৫ রয়ে গেছে। এর মানে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর দ্রুত না বাড়লেও পাকিস্তানে অনেক দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আরো বহুদিন।
৯) বাংলাদেশের ৮৯-৯০ টাকায় এক ডলার পাওয়া যায়, চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে পাকিস্তানে এখন এক ডলার কিনতে ১৯০ রুপি লাগে। অথচ, ২০০৭ সাল পর্যন্ত রুপি’র বৈদেশিক মান টাকার তুলনায় আট শতাংশ বেশি ছিল।
১০) বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ জিডিপি’র ১৭.৫ শতাংশ, অথচ পাকিস্তানে তা জিডিপি’র ৪৭ শতাংশ। প্রতি বছর পাকিস্তানের লেনদেনের ভারসাম্যের কারেন্ট একাউন্টের ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে। উপরন্তু, সরকারী বাজেটের ক্রমবর্ধমান বিরাট অংশ তাদেরকে বৈদেশিক ঋণের সুদ এবং আসল পরিশোধে বরাদ্দ করতে হচ্ছে।
১১) বাংলাদেশের নারীদের ৩৬ শতাংশ বাড়ীর আঙিনার বাইরে কর্মরত, পাকিস্তানে এই অনুপাত মাত্র ১৪ শতাংশ।
১২) বাংলাদেশের শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২১, আর পাকিস্তানের ৫৯।
১৩) বাংলাদেশের শতভাগ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে, অথচ পাকিস্তানের ৭৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।

উপরের তথ্য-উপাত্তগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, পাকিস্তান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৌঁড়ে আর কখনোই বাংলাদেশের নাগাল পাবে না ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ যদি দুর্নীতি এবং পুঁজিপাচার দমন করতে পারে তাহলে পাকিস্তানের চাইতে আরো অনেক বেশি এগিয়ে যাবো আমরা। বিশেষত, পৌনে সাত লক্ষ কর্মকর্তা-সিপাহীর সশস্ত্র বাহিনীর বোঝা যদ্দিন পাকিস্তানকে বইতে হবে তদ্দিন ক্রমাগতভাবে পিছিয়ে যাওয়াই পাকিস্তানের নিয়তি। অযৌক্তিক পাকিস্তান-প্রেম ঝেড়ে ফেলতেই হবে আমাদেরকে।
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজকাল
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ছিনতাই ট্রাকসহ সাবেক ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার