ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ১৫ জুলাই, ২০২১ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

প্রকল্প গ্রহণে সত্যিকার জাতীয় অগ্রাধিকার প্রতিফলিত হতে হবে

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪টি মেগাপ্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে যেগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চমকপ্রদ গতিশীলতা অর্জন করবে: পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, ঢাকা-ফরিদপুর-যশোর রেললাইন, যমুনা রেলসেতু, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং দোহাজারী-কঙবাজার রেললাইন। কিন্তু, এই ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে এমন কয়েকটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলো গ্রহণে সত্যিকার জাতীয় অর্থনৈতিক প্রয়োজনের চাইতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খেয়ালখুশি প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে করা হয়। এহেন মানসিকতা অচিরেই পরিত্যাজ্য। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পর্যায়ে রয়েছে সে পর্যায়ে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দ-অপছন্দের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বের দাবিদার দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামোর মারাত্মক ঘাটতি পূরণকে ত্বরান্বিতকরণ। কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠার চাইতে অনেক বেশি জরুরি এমন সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন, যেগুলোর অভাব উন্নয়নের গতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে চলেছে। এজন্য প্রয়োজন প্রকৃত প্রকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি (project analysis) অনুসরণ করে সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য (feasible) প্রকল্প নির্বাচন।
খামখেয়ালি-উদ্ভূত প্রকল্পের উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই উল্লেখ করবো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রসঙ্গটি। প্রায় এক লক্ষ তের হাজার বিরান্নব্বই কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাত্র ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই নির্মীয়মান প্ল্যান্ট প্রকল্প-মূল্যায়নের (project evaluation) পদ্ধতি প্রয়োগ করে কখনোই গ্রহণযোগ্য (feasible) প্রমাণ করা যাবে না, কারণ ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেকগুলো বিকল্প প্রযুক্তি বিশ্বে পাওয়া যাবে যেখানে এর অর্ধেকেরও কম ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রকল্পে ঐ পরিমাণ বিদ্যুৎ অনেক বেশি নিরাপদে উৎপাদন করা যাবে। রাশিয়া থেকে এই প্রকল্পের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া গেছে। কিন্তু এই ঋণের লোভে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এরকম একটা ব্যয়বহুল প্রকল্প বাংলাদেশ কেন গ্রহণ করল? কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু বঙ্গবন্ধু একটি পারমাণবিক প্রকল্পের স্বপ্ন দেখেছিলেন তাই তাঁর কন্যা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। তবুও প্রশ্ন উঠবেই পারমাণবিক প্রকল্পের মত একটা মহাবিপজ্জনক প্ল্যান্ট বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের সীমানার একেবারে মাঝখানে পাবনার রূপপুরে স্থাপিত হওয়া আদৌ কি গ্রহণযোগ্য? পারমাণবিক প্ল্যান্টের দুর্ঘটনা খুব বিরল নয়। প্রধানমন্ত্রীর জীবদ্দশায় বড় কোন দুর্ঘটনা না-ও ঘটতে পারে, কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত বৈজ্ঞাানিক সত্য হলো একটু অসাবধান হলেই পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে বিপজ্জনক বিকীরণ (radiation) বেরিয়ে যেতে পারে যা প্ল্যান্টের আশেপাশের এলাকার জনগণের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করবে। এর মানে, পারমাণবিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের মত ঘনবসতির দেশের জন্য নিরাপদ বিবেচিত হতে পারে না। অথচ, আমাদের নীতি-প্রণেতারা এই মহাবিপজ্জনক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে চলেছেন!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী গত ৭৬ বছরে সংঘটিত পারমাণবিক প্রকল্পের ভয়াবহ কয়েকটি দুর্ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের থ্রি মাইলস আইল্যান্ড, ইউক্রেনের চেরনোবিল এবং জাপানের ফুকুশিমার খবর পত্র-পত্রিকায় পড়েই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়তাম এই ভেবে যে, চেরনোবিল যদি ইউক্রেনের বিরল-বসতি অঞ্চলে অবস্থিত না হয়ে বাংলাদেশের রূপপুরে অবস্থিত হতো তাহলে ঐ নিউক্লিয়ার মেল্টডাউনের ফলে চেরনোবিলের চারিপাশের আনুমানিক এক লাখ চল্লিশ হাজার মানুষের নানাবিধ ক্ষতির পরিবর্তে বাংলাদেশে এক কোটি চল্লিশ লাখ মানুষের জন্যে মহাবিপদ সৃষ্টি হতো! (যেহেতু রেডিয়েশনের কারণে সৃষ্ট প্রাণঘাতী রোগগুলো সাথে সাথে হয়না, তাই মানুষের মৃত্যুসংখ্যা নিরূপণ কঠিন হয়।) আমরা অনেকেই এখন ভুলে গেছি যে ঐ মেল্টডাউনের ৩৫ বছর পরেও চেরনোবিলের চারিদিকের কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাকে এখনো মানব-বসতির অযোগ্য ঘোষণা করে ঐ এলাকাকে বিরানভূমি (ওয়েস্টল্যান্ড) করে রাখতে হয়েছে, প্রাণঘাতী রেডিয়েশনের ঝুঁকি এখনো অতি বিপজ্জনক থাকায় ঐ এলাকায় প্রটেক্টিভ আবরণ ছাড়া আজো কোন মানবসন্তানের যাওয়া বিপজ্জনক। পারমাণবিক দুর্ঘটনা নিরোধের ব্যবস্থা যতই অত্যাধুনিক হোক না কেন তা যে সুনামির মত প্রলয়ঙ্করী প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে প্রায় অকার্যকর প্রমাণিত হতে পারে তার নজির সৃষ্টি হয়েছে জাপানের ফুকুশিমায়। ঐ দুর্ঘটনা ভয়াবহ পরিণতি সৃষ্টি করার আগেই তার অভিঘাতকে সীমিত করা গেছে, কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতির আশংকা এখনো জাপানকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে। বাংলাদেশের যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে ’যমুনা ফল্ট’ নামের একটি ’টেকটোনিক ফল্ট’ রয়েছে, তাই বাংলাদেশের মাঝামাঝি অঞ্চলকে ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে খোদ যমুনা নদীর জন্মই হয়েছে প্রায় ৪০০ বছর আগে সংঘটিত এতদঞ্চলের মহা-ভূমিকম্পের কারণে, যার ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রধান প্রবাহ পুরানো খাতের পরিবর্তে জামালপুর থেকে বর্তমান যমুনা নদীর খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরানো ধারাটি ক্ষীণকায় হয়ে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ভৈরবে এসে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। ঐ ধরনের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প হলে রূপপুর পারমাণবিক রি-এক্টর যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটাবে না তার গ্যারান্টি কী? এই মহাপ্রলয়ের ঝুঁকি কেন নিচ্ছি আমরা?
বলা হচ্ছে, প্রকল্প চালু হওয়ার ২০ বছরের মধ্যেই রাশিয়ার ঋণ সুদাসলে শোধ হয়ে যাবে। রাশিয়ার রোসাটম নামের যে প্রতিষ্ঠানটি এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে তারা প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে আনুমানিক ৬০ বছর আয়ু হবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এক বছর রোসাটম প্ল্যান্টটি পরিচালনা করবে। খুবই উদ্বেগজনক হলো, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার যখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট প্রকল্প গ্রহণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩০০ কোটি ডলার থেকে ৪০০ কোটি ডলার। তার মানে শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় প্রাক্কলিত ১৩৫০ কোটি ডলারের চাইতেও অনেক বেশি হবে হয়তোবা। কিন্তু, ব্যয় আর না বাড়লেও ‘গরীবের এই ঘোড়ারোগ’ কখনোই প্রশংসনীয় বিবেচিত হবে না। রাশিয়া থেকে ঋণ পেয়েছি বলেই এহেন ‘সাদা হাতি’ প্রকল্প নেয়া কখনোই যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ করা যাবে না। এখন শোনা যাচ্ছে পটুয়াখালির আরেকটি জায়গায় গণচীনের অর্থায়নে দ্বিতীয় পারমাণবিক প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আল্লাহর ওয়াস্তে ক্ষান্ত দেন! ১৩৫০ কোটি ডলারে আরো অনেক বেশি জরুরি প্রকল্প গ্রহণ বাংলাদেশের জন্য এখন ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কলামে সে সম্পর্কে আলোকপাত করছি।
দ্বিতীয় যে কম প্রয়োজনীয় প্রকল্পের উল্লেখ করবো সেটা হলো ঢাকা-ফরিদপুর-যশোর রেললাইন। পদ্মাসেতু দিয়ে মহাসড়কের মাধ্যমে ঢাকার সাথে দক্ষিণবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই রেললাইন অনেকখানি অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে। অথচ, প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে! যমুনা রেলসেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে বর্তমান বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর রেলপথের সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে। তৃতীয় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দুই-তৃতীয়াংশ ক্যাপাসিটি এখনো অব্যবহৃত রয়ে গেছে। আমরা নিজেরাও ব্যবহার করতে পারছি না, অন্য কোন দেশের কাছে এই স্যাটেলাইটের উদ্বৃত্ত ক্যাপাসিটি বিক্রয়ও করতে পারছি না। অথচ, এখন কৃষিখাতে ব্যবহারের অজুহাত দিয়ে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তোড়জোর শুরু হয়ে গেল! বঙ্গবন্ধুর নামে হলেও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এটার প্রয়োজন প্রশ্নসাপেক্ষ। এসব প্রকল্পের চাইতে নিচের জরুরি প্রকল্পগুলো কি বেশি অগ্রাধিকার দাবি করে না?
১) বাংলাদেশের একমাত্র অয়েল রিফাইনারী চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারী ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৫ লাখ টন ক্যাপাসিটি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অথচ, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ টন পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট আমদানি করছে। এর মানে, প্রতি বছর এখন ৫০/৫৫ লাখ টন রিফাইনড পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট বাংলাদেশকে সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে, এবং এ-বাবদ প্রতি বছর অতিরিক্ত মূল্য হিসেবে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে সরকারকে। ইস্টার্ন রিফাইনারীর বয়স এখন ৫৩ বছর, এর ‘ইকনমিক লাইফ টাইম’ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এখন আশি লাখ থেকে এক কোটি টন ক্যাপাসিটির একটি অয়েল রিফাইনারী প্রতিষ্ঠা দেশের জন্য ফরজ হয়ে গেছে, অথচ প্রচণ্ড লবিয়িং এর শিকার হয়ে রিফাইনারী প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি প্রায় এক দশক ধরে ঝুলে রয়েছে!
২) তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা জরিপ এক বছর আগেই সম্পন্ন হয়েছে, এবং চীনকে নাকি এই প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। অথচ, ভারতের ভেটোর কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ভারত যদি তাদের ‘চিকেন নেক করিডর’ এবং ‘সেভেন সিস্টার্সের’ নিরাপত্তার অজুহাতে চীনকে এই প্রকল্পে কাজ করতে দিতে নারাজ থাকে তাহলে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে কিংবা অন্য কোন দেশের অংশগ্রহণে এই মহাগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাধা কোথায়? তিস্তা অববাহিকার জনগণের অবর্ণনীয় দুর্দশা লাঘবের স্বপ্ন-দেখানো এই প্রকল্পের নির্মাণব্যয় ২/৩ বছরের মধ্যেই সুদাসলে উঠে যাবে, এটা চ্যালেঞ্জ দিয়েই বলা যায়।
৩) বাংলাদেশে এখনো একটি পেট্রো-কেমিক্যাল কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। অথচ, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ তৈরি-পোশাক রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। একটি পেট্রো-কেমিক্যাল কমপ্লেঙ থেকে কৃত্রিম-তন্তু উৎপাদন করা গেলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের সংস্থান হয়ে যাবে–এটা কি সরকারের জানা নেই? (অবশ্য, মহেশখালিতে একটি বিদেশী কোম্পানি একটি পেট্রো-কেমিক্যাল কমপ্লেঙ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি বরাদ্দ নিয়েছে)।
৪) বাংলাদেশে এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। পাকিস্তান আমলের লোক-দেখানো সীমিত ক্যাপাসিটির ইস্পাত কারখানাটি বিশ্ব ব্যাংকের গোল্ডেন হ্যান্ড-শেক কর্মসূচির আওতায় বন্ধ করে দেওয়ার পর দু’দশকেও এ-ব্যাপারে সরকারের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়নি দেখে সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বর্তমান পর্যায়ে ইস্পাত-দ্রব্যের জন্য বিদেশের উপর শতভাগ-নির্ভরতা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। আর, প্রতি বছর মৌলিক ইস্পাত-দ্রব্য আমদানির জন্য আমাদেরকে কত হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে সেটা কি কখনো হিসাব করা হয়েছে?
৫) ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজের নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশের পদ্মা নদী এবং দক্ষিণাঞ্চলের অনেকগুলো শাখানদী শুষ্ক মৌসুমে মরোমরো অবস্থায় পৌঁছে যায়। উপরন্তু, কুষ্টিয়া, যশোর, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরার অনেকগুলো এলাকায় নদীর লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সংকটে পরিণত হয়ে গেছে। প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প এই সমস্যাগুলোর যৌক্তিক সমাধান হিসাবে বিশেষজ্ঞদের দৃঢ় অভিমত পাওয়ার পর প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও এই প্রকল্পটি কোন এক অজ্ঞাত কারণে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাভে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। কয়েক বছর আগে প্রাক্তন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ-ব্যাপারে একনেক পর্যন্ত গিয়েও প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। জনশ্রুতি রয়েছে যে এর পেছনে ভারতের বিরোধিতাই প্রকৃত কারণ ছিল! এই অতি-প্রয়োজনীয় প্রকল্পটির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সুবিবেচনা কামনা করছি।
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর,
অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজকাল
পরবর্তী নিবন্ধ‘অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান’