ড. মইনুল ইসলামের কলাম

| বৃহস্পতিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন আলামত থেকে বোঝা যাচ্ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি খুব বন্ধুসুলভ নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় থেকেই প্রফেসর ইউনূসের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈরী আচরণ তখনকার মার্কিন প্রশাসনের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। তদানীন্তন মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্যাপারটি সহজে ভুলে যাওয়ার কথা নয়! ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর হয়তো এই ইস্যুতেই শেখ হাসিনার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এতদসত্ত্বেও মার্কিন পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হলো। এর আগে বাংলাদেশকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে মার্কিন সরকার মার্কিন নেতৃত্বাধীন চীন-বিরোধী সামরিক জোট ‘কোয়াডে’ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যে আমন্ত্রণ বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কোয়াড ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত সামরিক জোট। কিন্তু, বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতেও যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সরাসরি বাংলাদেশ-বিরোধী অবস্থানে চলে গেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই মার্কিন প্রস্তাবে বাংলাদেশ সাড়া না দেওয়ায় ভারতও বিলক্ষণ নাখোশ হয়েছে। ভারতও হয়তো মনে করছে, বাংলাদেশ ক্রমশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের র‌্যাপিড একশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর সাতজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল, যা বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশে প্রায় ৬০০টি বিচার-বহির্ভূত খুন ও গুমের গুরুতর অভিযোগে মার্কিন সরকার এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করল।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক আয়োজিত ৯-১০ ডিসেম্বরের গণতন্ত্র সম্মেলনে বিশ্বের ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোয় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ব্যাপারেও যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ রয়েছে সে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ এবং নেপাল ঐ গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিল। (পাকিস্তান অবশ্য দাওয়াত পেয়েও সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেনি)। ভোটের রাজনীতি চালু থাকা সত্ত্বেও বাদ পড়া দক্ষিণ এশীয় দেশ ছিল বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা। এর মানে, এই দু’দেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো যথেষ্ট জালিয়াতিমুক্ত হিসেবে বিশ্বস্বীকৃতি পায়নি। ভুটান রাজতন্ত্র হিসেবে দাওয়াত পায়নি, আর আফগানিস্তানের মৌলবাদী তালেবান সরকার এখনো মার্কিন স্বীকৃতি না পাওয়ায় ঐ সরকারেরও দাওয়াত না পাওয়াই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন যে বিশ্বব্যাপী প্রশ্নবিদ্ধ এই সত্যটা গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। প্রকৃত প্রস্তাবে ২০১৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পথ ধরে গত তিন বছর বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনী গণতন্ত্রের প্রক্রিয়াই লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। দেশের সকল স্তরের নির্বাচনই যেভাবে সন্ত্রাস এবং জালিয়াতির দুষ্টচক্রে বন্দী হয়ে গেছে তা থেকে যে সহজে জাতি পরিত্রাণ পাবে না। এরপর মানবাধিকার-লঙ্ঘন ইস্যুতে র‌্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বিশ্বকে জানান দিল যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। মার্কিন চাপ প্রয়োগের শিকার আরো একবার হয়েছিল বাংলাদেশ, যার ফলে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকারকে। বাংলাদেশ কিউবার কাছে পাটের বস্তা রপ্তানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-আরোপিত অবরোধ কেন লঙ্ঘন করল তার কৈফিয়ত চেয়ে ১৯৭৪ সালে খাদ্যশস্যবাহী কয়েকটি জাহাজকে সাগরের যাত্রাপথ থেকে বিভিন্ন দেশের বন্দরে নোঙর করতে বাধ্য করে যাত্রা বিলম্বিত করে দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, কূটনৈতিক চ্যানেলে দুঃখ প্রকাশ করে কয়েক মাস পর মার্কিন খাদ্যসাহায্য পুনরায় চালু করা গেলেও সরকার দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে পারেনি। প্রফেসর নুরুল ইসলামের বই ‘মেকিং অব এ নেশন বাংলাদেশ: এন ইকনমিস্ট’স টেইল’ এ এই কাহিনীর বর্ণনা রয়েছে। ২০২২ সালের বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করায় এখন দেশকে অত বড়ো বিপদে পড়তে হবে না ইনশাআল্লাহ। এতদ্‌সত্ত্বেও মার্কিন অবরোধ আমাদের জন্য বিপজ্জনক হবে।
বাংলাদেশে র‌্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিল ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার–সকল বাহিনী থেকেই এই এলিট ফোর্সের অফিসার ও কর্মচারীদেরকে ডেপুটেশানে র‌্যাবে নিয়োগ করা হয়। যদিও র‌্যাবের ফরমাল নিয়ন্ত্রণ পুলিশের আইজি’র অধীনে থাকে তবুও র‌্যাব পরিচালনায় অনেকটাই র‌্যাব কর্তৃপক্ষ নিজেরা ক্ষমতা প্রয়োগ করে। ২০০১-৬ মেয়াদের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জনৈক জামায়াতি স্বরাষ্ট্র সচিবের ডিজাইন মোতাবেক প্রথম থেকেই জনমনে র‌্যাব সম্পর্কে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে এই বাহিনীর কালো ড্রেসে জল্লাদের পোশাকের আবহ সৃষ্টি করা হয়, র‌্যাবের কর্মকান্ডেও পরিকল্পিত নিষ্ঠুরতার ছাপ থাকে আতংক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। র‌্যাব সৃষ্টির পর প্রায় আড়াই বছর বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে র‌্যাবের বিচার-বহির্ভূত হত্যার টার্গেটে পরিণত করেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা গত তের বছর র‌্যাবের অপারেশনের মূল টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
জামায়াত-শিবির একটি রক্তলোলুপ ফ্যাসিবাদী সিভিল আর্মি হিসেবে দেশের তাবৎ ‘কিলিং স্কোয়াড’গুলোর ’মাদার অর্গানাইজেশন’ হিসেবে সারা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও কুখ্যাত সংগঠন। তারা ইসলাম ধর্মের অত্যন্ত বিকৃত এক ধরনের ব্যাখ্যাকে পুঁজি করে এদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাস ও হতাকান্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখলের উন্মত্ত ও প্রাণঘাতী অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় ১৯৭৬ সাল থেকে এদেশে রাজনীতি করার অধিকার পাওয়ার পর থেকেই। প্রথমে ইসলামী ছাত্র শিবির ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে মাঠে নামলেও ১৯৭৮ সালে জামায়াতে ইসলামী স্বনামে মাঠে নামার পর আর নাম বদলাতে হয়নি তাদেরকে। গত ৪৫ বছরে তাদের ক্যাডার বাহিনী ফুলেফেঁপে বিশাল এক সিভিল আর্মিতে পরিণত হয়েছে। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড, ইন্দোনেশিয়ার জামাহ ইসলামিয়া, পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী, আফগানিস্তানের তালেবান, সৌদী আরব ও আফগানিস্তান থেকে উত্থিত আল-কায়েদা, ইরাক ও সিরিয়ায় ‘ইসলামিক স্টেট’ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধরত এবং ভিডিও ক্যামেরার সামনে বেশ কয়েকজন পশ্চিমা নাগরিকের শিরশ্ছেদ করার মত নারকীয় নিষ্ঠুরতার জন্মদাতা আইসিস বা আইসিল বা ইসলামিক স্টেট, আফ্রিকার আল-শাবাব ও বোকো হারাম–এগুলোর যে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সেটাই জামায়াত-শিবিরেরও অভিন্ন নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশে জেএমবি, হুজি, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টীম, আনসারুল ইসলাম বাংলাদেশ, হিজবুত তাহরীর, হিজবুত তাওহীদ–এ ধরনের হরেক কিসিমের নাম নিয়ে একেক সময় একেক জঙ্গী গোষ্ঠির যে তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে ওগুলো জামায়াত-শিবিরের সূতিকাগারে জন্ম নেয়া জঙ্গি গোষ্ঠী। কথায় বলে,‘রসুনের কোয়া অনেকগুলো হলেও গোড়া একটাই’–কথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে। প্রয়োজনমাফিক এসব ‘পকেট সংগঠনের’ জন্ম দিতেই থাকবে জামায়াত-শিবির।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকারে আসীন হওয়ার পর দেশে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীদের খুনোখুনি মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয়। বিশেষত, দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত জামায়াত ও বিএনপি’র কয়েকজন নেতাকে যখন ফাঁসি দেওয়া হয় তখন সারা দেশে জামায়াত-শিবির এবং তাদের এই জঙ্গিবাদী কিলিং স্কোয়াডগুলোর খুনোখুনি চরমাকার ধারণ করে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের হলি আর্টিজানের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পর্যন্ত দেশে সংঘটিত যাবতীয় খুন-জখম থেকে পুলিশ বাহিনীও রক্ষা পায়নি। এর ক্রোধান্বিত প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশোধ গ্রহণ শুরু হয়েছিল পুলিশ ও র‌্যাবের গ্রেফতার অভিযানগুলোর মধ্যে সংঘটিত ক্রসফায়ারে হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। যত ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক্‌ না কেন এগুলো নির্জলা বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আইনের শাসনই নাগরিকদের রক্ষাকবচ। সন্দেহভাজন জঙ্গি বিচারের মাধ্যমে অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার আগেই যদি পুলিশ বা র‌্যাবের গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা পড়তে শুরু করে তাহলে রাষ্ট্রের শাসকদের এবং গুপ্তঘাতকদের হুকুমদাতাদের মধ্যে আর কোন পার্থক্য থাকে না।
ক্রোধের যৌক্তিক কারণ রয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু, আইনের শাসনকে সমুন্নত রেখেই জঙ্গিবাদী ঘাতক বাহিনীকে নির্মূল করার অভিযানকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, হার্ট-এটাক–যে নামেই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকে ডাকা হোক্‌, এটা নির্জলা অসভ্যতা। ২০১৬ সালের পর দেশে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস অনেকখানি কমে গেলেও ক্রসফায়ারের মত আইনের শাসন থেকে বিচ্যুতি রাষ্ট্রের শাসকদের শাসনের নৈতিক অধিকারকে ভূলুিন্িঠত করেছে। আবশ্যক ছিল অতি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন জঙ্গি খুনিদেরকে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তি বিধান করা। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্যে গঠিত দুটো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি ট্রাইব্যুনাল বর্তমানে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার সানুনয় আবেদন, যথোপযুক্ত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কিলিং স্কোয়াডের আততায়ীদেরকে ট্রাইব্যুনালের বিচারে সোপর্দ করার ব্যবস্থা করা হোক্‌ এবং বিচারের সর্বোচ্চ সীমা দু’মাসের মধ্যে সীমিত করা হোক্‌। প্রয়োজনে, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগও রহিত করা হোক্‌। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বিচার-বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করার অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিল। তাই, আল্লাহর ওয়াস্তে ক্রসফায়ার বন্ধ করুন। র‌্যাবের বিরুদ্ধে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যদি বাংলাদেশে গেড়ে বসা বিচার-বহির্ভূত হত্যার অসভ্য কালচার থেকে জাতিকে কিছুটা পরিত্রাণ দেয় তাহলে জাতি আখেরে উপকৃত হবে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, এক্সট্রা-জুডিশিয়াল কিলিং সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ১৩ বছরেও কোন ‘সুয়ো মোটো’ নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।
অন্যদিকে, লাইনচ্যুত ভোটের রাজনীতি অবিলম্বে মেরামত করা সম্পর্কে যদি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন মহল যত্নবান না হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জাতি আরো বড় বিপদে পড়বে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের মাধ্যমে। এমনকি এই ইস্যুতে খোদ জাতিসংঘও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না। শাস্তি হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তখন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করে পার পাওয়া যাবে না। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুমের মত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যালট জবরদখলের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভে জমা রাখা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিংবা বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তেরী পোশাক রফতানির ওপর অবরোধ আরোপ করে তাহলে আমাদের বিপদ ও বেইজ্জতির সীমা থাকবে না। আমাদের উদীয়মান অর্থনীতিও এহেন পদক্ষেপের ফলে মুখ থুবড়ে পড়বে। অতএব, সাধু সাবধান!
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজ কাল
পরবর্তী নিবন্ধবীর মুক্তিযোদ্ধা বেলায়েত হোসেন