ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের চিন্তাভাবনা নেই : আইনমন্ত্রী

| শনিবার , ৬ মার্চ, ২০২১ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের কোনো পরিকল্পনা যে এখন সরকারের নেই, সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে এ আইনের ‘অপব্যবহার বা দুর্ব্যবহার’ কীভাবে বন্ধ করা যায়, সরকার সেই চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যাওয়ার পর ওই আইন বাতিলের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেই আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্য এল। এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল শুক্রবার নিজের নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় গিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী।
পরে কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ গ্রামে নিজের বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। খবর বিডিনিউজের।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আইন সংশোধনের এখনও কোনো চিন্তা ভাবনা নাই। আমরা এই আইন সংশোধনের কোনো চিন্তাভাবনা করছি না। আমরা যেটা করছি, এটার অপব্যবহার এবং দুর্বব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা করছি।
এর আগে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে অপব্যবহার এবং দুর্ব্যবহার, অর্থাৎ মিসইউজ অ্যান্ড অ্যাবিউজ যেটা বলা হচ্ছে, সেটা যাতে না করা যায়, সেরকম কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেটা এই ঘটনার আগেই আমি অফিস অব দ্য হিউম্যান রাইটস কমিশনারের সাথে আলাপ-আলোচনায় ছিলাম। এখন আবারও আলাপ-আলোচনায় আমরা আছি।
তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার সারা পৃথিবীর যে বেস্ট প্র্যাকটিস, এটা আমরা দেখব এবং আমরা একটা তুলনা করব। যদি মিসইউজ অ্যান্ড অ্যাবিউজ বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।
দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা থেকেই যায়।
এখন অনেকে বলছেন, সেই আশঙ্কা যে সত্যি ছিল, কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুই ‘তার প্রমাণ’। গত বছরের ৬ মে লেখক-অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাককে তার লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে অভিযোগপত্র দেওয়া হলে সেখানেও তাকে আসামি করা হয়।
গত দশ মাসে কয়েকবার আবেদন করেও জামিন পাননি ৫৩ বছর বয়সী মুশতাক। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হলে সারা দেশে শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।
এই প্রেক্ষাপটে গত ১ মার্চ আইনমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই আইনে কোনো অপরাধের অভিযোগ এলে পুলিশের তদন্তের আগে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বা তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া যাবে না- এমন একটি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এরপর অনেকেই মনে করেছিলেন, সরকার হয়ত আইন সংশোধনের কথা ভাবছে। শুক্রবার সকালে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আপনারা কিছু দিনের মধ্যেই দেখবেন।
তার ওই বক্তব্যকে ইতিবাচক অর্থে ধরে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ‘আইন সংশোধন হচ্ছে’ বলে খবরও প্রকাশ করে। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পর আইনমন্ত্রী নিজেই আইন সংশোধনের সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভান্ডালজুড়ির ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ
পরবর্তী নিবন্ধগুঁড়িয়ে দেয়া ইটভাটা চলছে ড্রাম চিমনিতে