টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন সাহসী, সক্ষম ও দক্ষ জনবল

শেখ বিবি কাউছার | শুক্রবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

একজন মানুষ যেমন সুস্থ মেরুদণ্ড ব্যতীত দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি একটি দেশ, একটি রাষ্ট্র, একটি সমাজ, একটি পরিবার সুশিক্ষা ব্যতীত উন্নত হতে পারে না। জাতিসংঘ ২০১৫ সালে দারিদ্র্য বিমোচন, বিশ্ব রক্ষা এবং একটি নতুন টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা হিসেবে সকলের জন্য সমৃদ্ধি নিশ্চিতে ১৭টি লক্ষ্য ও ১৬৯টি সহায়ক লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করে। যাকে বলা হয় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। এখানে টেকসই উন্নয়ন বলতে ঐ ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে বোঝায় যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা বা উন্নয়নও নিশ্চিত হয় আবার প্রকৃতি বা পরিবেশের উপর সে উন্নয়নের কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ যে উন্নয়নটা হবে তা যেন হয় টেকসই। এখানে ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে চতুর্থ লক্ষ্য হল মানসম্মত শিক্ষা বা গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা ও আজীবন শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। এখন প্রশ্ন হল এসডিজি সম্পর্কে আমরা কয়জনই বা জানি? আমাদের দেশের কয়জন মানুষের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে ধারণা আছে? কারণ এসডিজি সম্পর্কে যদি আমাদের স্বচ্ছ ধারণা না থাকে তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের হাতে হয়তো আর বেশি সময় নেই কারণ এখন ২০২২ সাল শেষ হওয়ার পথে। তারপরও সবাই মিলে যদি সমন্বিতভাবে কাজ করা যায় তাহলে যে লক্ষ্যমাত্রাগুলোতে পৌঁছানো এখনো বাকী আছে তা অর্জন করা কঠিন কিছু নয়। তাই এখনই প্রয়োজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, তরুণ প্রজন্ম, নারী এবং সাধারণ জনগণের সামনে এসডিজি বা এসডিজির লক্ষ্যগুলো তুলে ধরা। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এটা করা যায়। যেমন

. শিক্ষকদের ট্রেনিংগুলোতে এসডিজি এর উপর (প্রাথমিককলেজ) বাধ্যতামূলক একটা সেশন রাখা যেতে পারে। কারণ আমরা শিক্ষকরা জানলেই জানবে শিক্ষার্থীরা।

আমাদের দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ কিন্তু তরুণ প্রজন্ম। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই কর্মক্ষম তরুণ প্রজন্মের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তাদের কাজে লাগতে হবে।

. অভিভাবকদের নিয়ে মিটিং করা যেতে পারে। ৩.এসডিজি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা যেন একটা প্রাথমিক ধারণা পায় তাই তাদের পাঠ্য বইয়ে এটা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। ৪. উন্নয়নের ধারায় নারীকে যুক্ত করতে হবে। ৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা যেতে পারে। ৫. বিলবোর্ড করা যেতে পারে। ৬. ক্যালেন্ডার তৈরি করা যেতে পারে ইত্যাদি।

এসডিজি সম্পর্কে আমাদের যত বেশি ধারণা থাকবে ততই এর লক্ষ্যমাত্রা গুলো অর্জন করা আমাদের জন্য সহজ হবে। কারণ এসডিজিতে বলায় আছে কাউকে বাদ না দিয়ে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে। এমনকি প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, চা শ্রমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মতো সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় যুক্ত করতে হবে। এটি বাস্তবায়নে সবার সংশ্লিষ্টতা থাকা প্রয়োজন। এখন দেশে জনসংখ্যার অর্ধেক অংশই কিন্তু যুবক বা তরুণ প্রজন্ম। ধারণা করা হচ্ছে ২০৪১ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ২১ কোটি বা তারও বেশি। তখন যুবক বা তরুণ জনসংখ্যা তুলনামূলক কমবে। তাই এখনই প্রয়োজন দেশের এই তরুণদের দক্ষ ও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা। তাদের জন্য বিনিয়োগ করার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে তরুণদের গুরুত্ব দিতে হবে। ২০৩০ সালে তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশের কথা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। এখানে সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই এগিয়ে না আসে।

লেখক: প্রভাষক, নোয়াপাড়া কলেজ, রাউজান, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ষবরণে ফানুস থেকে আবার যেন আগুন না ছড়ায়
পরবর্তী নিবন্ধভাবনার অন্তর্জালে