জোয়ান অব আর্ক : জীবনের মূল্যে স্বদেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার

| সোমবার , ৩০ মে, ২০২২ at ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ

 

ফ্রান্সের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেত্রী এবং বিশ্বজুড়ে কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত কিশোরী জোয়ান অব আর্ক। ইংল্যান্ডের সাথে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধে ফ্রান্সের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে অর্লিনস অবমুক্ত করতে জোয়ান ফরাসি সেনাবাহিনির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্মম প্রহসনমূলক এক বিচারে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তাঁকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। জোয়ান অব আর্কের জন্ম ১৪১২ সালে ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলে ডমরেমির এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। নিদারুণ দারিদ্র্য শৈশব থেকেই জোয়ানকে করে তুলেছিল কঠোর পরিশ্রমী। উপরন্তু অসাধারণ ধর্মভীরু ও সরল স্বভাবের জন্যে তিনি ছিলেন সকলের প্রিয়। তেরো বছর বয়সে ক্যাথলিক সন্ত জোয়ান দাবি করলেন যে, তিনি দৈববাণী শুনতে পেয়েছেন, ইংল্যান্ডের সাথে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিজয়ে ফ্রান্সের সেনাবাহিনির নেতৃত্ব নিতে হবে তাঁকে যা সুগম করে দেবে সপ্তম চার্লসের রাজাভিষেকের পথ। দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রত্যয়ী জোয়ান অনেক কষ্টে, গোপনে চার্লসের সাথে দেখা করে সৈন্য প্রার্থনা করেন। চার্লসের পরামর্শ ও সাহায্যে বিরাট সেনাবাহিনি নিয়ে জোয়ান ইংরেজদের কবজা থেকে দখল করে নেন অর্লিনস। এরপর একে একে আরো কয়েকটি যুদ্ধে জয়ী হন জোয়ান। রিমস অধিকারের পর চার্লসের অভিষেক সম্পন্ন হয়। কিন্তু ইংরেজরা জোয়ানকে জব্দ করার পাঁয়তারা খোঁজে। এতে সহযোগিতা করে মধ্য ফ্রান্সের বার্গানডি অঞ্চলের বিশ্বাসঘাতক কিছু অধিবাসী। বন্দি হন স্বাধীনতাকামী জোয়ান। প্রহসন করে তাঁর বিচারের ভার ছেড়ে দেওয়া হয় গির্জা অর্থাৎ যাজকের হাতে। যাজক জোয়ানের কার্যকলাপ প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধী অভিযোগ এনে শাস্তি হিসেবে তাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেয়। তাঁর জন্মস্থানটি স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত। শেকসপিয়র, ভলতেয়ার, শিলে, চাইকোভস্কি, মার্ক টোয়েন, বেট্রোল্ট বেখট, জর্জ বার্নার্ড শ প্রমুখের রচনায় নানাভাবে এসেছে দেশের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ এই কিশোরীর জীবনকথা।

রায় অনুযায়ী ১৪৩১ সালের ৩০ মে ঘটে ইতিহাসের নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম একটি ঘটনা জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় উনিশ বছরের কিশোরী নির্দোষ জোয়ান অব আর্ককে। ২৫ বছর পর পোপ তৃতীয় ক্যালিস্টাস জোয়ানকে নির্দোষ প্রমাণ করেন এবং বলা হয় জোয়ান ধর্মবিরোধী নয়, খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি জোয়ানের দণ্ড নাকচ করে দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় দিবস
পরবর্তী নিবন্ধমহাসড়কে গাড়ি চলাচলে অনিয়ম বন্ধ করা হোক