জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিশ্বমানের ইনডোর কমপ্লেক্স

উদ্বোধন কাল

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ

প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিশ্বমানের একটি ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে। ইনডোর প্র্যাকটিসের জন্য যত সুযোগ সুবিধা দরকার তার সবই যুক্ত করা হয়েছে বিশ্বমানের এই ইনডোরে।

ইনডোর প্র্যাকটিসের জন্য ক্রিকেট পিচ আমদানি করা হয়েছে বিদেশ থেকে। স্টিল স্ট্রাকচারের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার পাশাপাশি ভিতরেও ক্রিকেটারদের যা যা প্রয়োজন তার সবই সন্নিবেশিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জাপানি সহায়তায় ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্সটি তৈরি করে দিয়েছে। দেশে প্রথম এই ধরনের বিশ্বমানের কোন ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হলো বলে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে যে, আগামীকাল শনিবার দুপুরে দৃষ্টিনন্দন এই ইনডোর কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, জাপানের জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট আউটার রিং রোড। সাগরপাড়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির সাথে শহরের যোগাযোগ সহজ করতে তিনটি ফিডার রোড যুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩ নম্বর ফিডার রোডটি সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে নগরীর পোর্ট কানেক্টিং রোডের সাথে যুক্ত হয়েছে।

সাগরপাড় থেকে আসা এই রাস্তাটি সাগরিকা রোডের সাথে যেখানে যুক্ত হয়েছে সেখানে আগে থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একটি ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্স ছিল। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অংশ হিসেবে ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিজসহ জিম করার জন্য ওই ইনডোরটি নির্মাণ করা হয়। অন্তত আঠার বছর আগে নির্মিত পুরানো ইনডোরটির অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে উঠে। এটির ভিতরের সুযোগ সুবিধাও ঠেকেছিল একেবারে তলানিতে।

সিডিএ সূত্র জানায়, ফিডার রোড-৩ সুষ্ঠুভাবে নির্মাণের জন্য জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ইনডোরের জায়গাটি খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এটি না ভাঙ্গলে রাস্তার এ্যালাইমেন্ট পরিবর্তন করতে হতো। এই অবস্থায় পুরানো ইনডোরটি ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ এবং নতুন করে একটি ইনডোর নির্মাণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে করে রাস্তা নির্মাণের জন্য উক্ত ইনডোরটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।

ইনডোরের জায়গাটিও সড়কের জন্য ব্যবহার করা হয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড উক্ত জায়গার জন্য সিডিএ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ নেয়নি। এই দায়বোধ থেকে সিডিএ প্রকল্পের টাকা থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয় করে ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করে দিয়েছে।

সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভ্যানুর সাথে একটি ইনডোর কমপ্লেক্স বাধ্যতামূলক। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২০০৪ সালে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম নির্মাণ করার সময়ই ওখানে ইনডোর নির্মাণ করেছিল।

চট্টগ্রামের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভ্যানু হিসেবে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশে নির্মিত পুরনো ইনডোরটি ভেঙ্গে স্টিল স্ট্রাকচারের দৃষ্টিনন্দন ইনডোর কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জাপান এবং বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির অংশ হিসেবে ইনডোর কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্প্যাক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল।

অত্যন্ত নান্দনিক ডিজাইনের ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্সে ক্রিকেটারদের ইনডোর প্র্যাকটিজের পিচ, নেট, চেঞ্জিং রুম, গোছলের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রয়োজনগুলো মিটানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নয়নাভিরাম ডিজাইনের এমন ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্স দেশে আর নেই বলে মন্তব্য করে সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীকে বলেন, খোলা ঝিনুকাকৃতির ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্সটি স্টেডিয়ামের ঠিক পেছনেই নির্মাণ করা হয়েছে।

স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেটের পাশে গড়ে তোলা ইনডোরটি জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মান এবং সুযোগ সুবিধা ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আগামী শনিবার বেলা ১২টায় এই ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হবে। পূর্ত সচিব কাজী ওয়াসিউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইনডোর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বিশ্বমানের ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং উদ্বোধনকে চট্টগ্রামের জন্য অনেক বড় সুখবর বলে মন্তব্য করে বলেন, এই ইনডোর চট্টগ্রামের ক্রিকেটের বিকাশ এবং মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্সটি যাতে ব্যবহার উপযোগী থাকে এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রিকেট খেলোয়াডেরা যাতে এটি ব্যবহার করে নিজেদের বিকশিত করতে পারেন সেই সুযোগ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গক্রমে টেনিস কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা উল্লেখ করে সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ২০ বছর আগে নির্মিত কমপ্লেক্সটি কোন কাজে লাগেনি। একদিনের জন্যও ব্যবহার করা যায়নি। ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্স যেনো এই ধরণের কোন বন্ধ্যাত্বের কবলে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি ইনডোরটি ব্যবহারের জন্য একটি নীতিমালা প্রনয়ণেরও অনুরোধ জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেছেন, আমরা ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করে দিয়েছি। উদ্বোধনের পরই আমরা এটি বিসিবির কাছে হস্তান্তর করে দেবো। বিসিবি এটির ব্যবহারসহ পরবর্তী বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করবে। ইনডোর কমপ্লেক্সটিকে একটি আইকনিক স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে আর কোথাও এত সমৃদ্ধ এবং নান্দনিক ইনডোর ক্রিকেট কমপ্লেক্স নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতথ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, চকবাজার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় তালিকায়ও ঠাঁই হয়নি জিপিএ-৫ পাওয়া ৩৮২ জনের