জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পাউবো

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১০ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ

দেড় হাজার কোটিরও বেশি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করতে গিয়ে পদে পদে বিপাকে পড়ছে সংস্থাটি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রায় একই ধরনের প্রকল্প থাকা এবং বিস্তৃত এলাকায় বন্দরের কর্মকান্ড চলায় শহরের ভিতরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হিমশিম খাওয়ার দশা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান পানি উন্নয়ন বোর্ড আজ বন্দর ভবনে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক আহ্বান করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে অনুষ্ঠাতব্য এই সভা থেকেই কার্যতঃ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৬ সালে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শহরের বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে সর্বমোট এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। প্রকল্পটিতে খাল থেকে মাটি উত্তোলন এবং রেগুলেটর নির্মাণ, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং নালা নর্দমা তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন লাভ করে। এরপর থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে।
এই প্রতিবন্ধকতার জন্য কাউকে দায়ী না করে সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেছেন, আসলে বিষয়টিতে সমন্বয়ের অভাব প্রকট হয়ে উঠে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। অপরদিকে সিডিএ দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী নদীর তীর ধরে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও সড়ক নির্মাণের পৃথক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পটিতেও উক্ত সাড়ে আট কিলোমিটার এলাকার ১২টি খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণের কর্মকান্ড শুরু হয়েছে। এরমধ্যে চারটি স্লুইচ গেটে বোট পাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণ করেছে সিডিএ। ওই রিং রোডে সবগুলো খালে রেগুলেটর স্থাপনের কাজ সিডিএ সম্পন্ন করছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্ণফুলী এবং হালদা নদীতে পড়া ৩২টি খালের মুখে রেগুলেটর স্থাপনের কথা রয়েছে। শহর থেকে বঙ্গোপসাগরে যাওয়া ১২টি খালের মুখে স্লুইচ গেট স্থাপনের কাজও রয়েছে প্রকল্পটিতে। এখন সিডিএ শহর থেকে কর্ণফুলী নদীতে পড়েছে এমন আটটি খালের মুখে স্লুইচ গেট স্থাপন করছে। অপরদিকে আউটার রিং রোডের নিচ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়া ১২টি খালেও সিডিএ রেগুলেটর স্থাপন করেছে। এতে করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় এসব খালে আর কাজ করার সুযোগ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী বলেছেন, বর্তমানে কালুরঘাট ব্রিজ থেকে কাটাখালী ব্রিজের মুখ পর্যন্ত এলাকাসহ সিডিএ করেনি এমন ২৩টি খালে রেগুলেটর স্থাপনের কাজ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথেও সমস্যা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাট থেকে নেভাল একাডেমি পর্যন্ত ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার এলাকার নদী পাড়ের ব্রিক ওয়ালটি ভেঙ্গে আরসিসি ওয়াল করে দেয়ার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে ১৫ নম্বর ঘাট থেকে বন্দর পর্যন্ত এবং বন্দর এলাকা বাদ দিয়ে বাংলাবাজার থেকে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত মোট ১৮ কিলোমিটার ফ্লাডওয়াল নির্মানের কথা। কিন্তু এখন বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন টার্মিনালসহ স্থাপনার কারনে নদীর পাড়ের এই ফ্লাডওয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এতে করে ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো পুরোদমে কাজই শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র কয়েকটি রেগুলেটর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কি করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আজ সকালে বন্দর ভবনে জরুরি একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশগ্রহন করে প্রকল্পটির প্রতিবন্ধকতা দূর করার পন্থা খুঁজে বের করবেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে চট্টগ্রামের জন্য সুফল বয়ে আনে এমন কর্মপন্থাই নির্ধারণ করা হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের প্রকল্পের কাজ বেশ দ্রুত গতিতে চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহিত এই প্রকল্পের সুফল মিলতে শুরু করেছে। আমাদের দুইটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রত্যাশিত সুফল মিলবে। তবে টুকটাক কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটি নিয়ে আজ বৈঠক হবে। সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী ত্রয়ন কুমার ত্রিপুরার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদেরকে সবার জন্য কল্যানকর একটি পন্থা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের প্রকল্পের কি কি কাজ করতে হবে বা কি কি কাজ করতে হবে না তা নির্ধারণ করে নতুন করে ডিপিপি তৈরি করতে হবে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটির কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনুমতি ছাড়া সড়ক কাটায় ওয়াসার কাজ বন্ধ করল চসিক
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে আত্মসমর্পণ করছে অর্ধশতাধিক জলদস্যু