জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি নম্বরেই নাগরিকের পরিচয়

বিবিসি বাংলা | শুক্রবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২০ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

জন্মের পর ৪৫ দিনের মধ্যে ১০ ডিজিটের ইউনিক নম্বর নিতে হবে। মৃত্যু পর্যন্ত এই নাম্বার দিয়েই একজন নাগরিককে চিহ্নিত করা হবে। দেশে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি নাম্বার দিয়ে একজন নাগরিককে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারি মাসেই শুরু করা হচ্ছে শিশুদের ১০ ডিজিটের একটি নম্বর দেয়ার কার্যক্রম। এই নম্বরের নাম দেয়া হয়েছে ইউনিক আইডি নম্বর। কর্তৃপক্ষ বলেছে, স্কুল কলেজে ভর্তি এবং হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পেতে এই নম্বর বাধ্যতামূলক করা হবে। কিন্তু এমন উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার প্রশ্নেই নানা আলোচনা চলছে। এর বাস্তবায়নের জটিলতার প্রশ্নও আলোচনায় এসেছে।
শিশুদের নম্বর কেন : দেশে আইন করে শিশুদের জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অনেক আগে। সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সাবেক একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কোন শিশুর জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রেই পিতা-মাতার নামসহ বিভিন্ন তথ্য দিতে হয়। স্কুলে ভর্তিসহ বিভিন্ন সুবিধা পেতে এখন শিশুদের জন্ম সনদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন ইউনিক আইডি দেয়ার এই উদ্যোগ নিয়ে তার প্রশ্ন রয়েছে। প্রয়োজনীয়তার প্রশ্নে কর্তৃপক্ষ যুক্তি হিসাবে তুলে ধরছে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং অন্যদিকে সন্ত্রাস-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে সহজে তথ্য পাওয়ার বিষয়কে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, কোন শিশুকে ইউনিক নম্বর দেয়ার মাধ্যমে জন্মের প্রথম দিন থেকেই একজন নাগরিকের তথ্য রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত হবে। নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মগহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম বলেছেন, অনেক সময় সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িতরা নাম-পরিচয়, জন্মতারিখ পাল্টিয়ে ফেলে। কিন্তু জন্মের প্রথম দিন থেকেই রাষ্ট্রের কাছে কোনো নাগরিকের তথ্য থাকলে তা পাল্টানোর সুযোগ কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেছেন, জন্ম থেকেই নাগরিকের তথ্য যখন থাকবে, তখন অপরাধ দমনে সেই তথ্য সহায়ক হবে।
ব্রিগেডিয়ার ইসলাম উল্লেখ করেছেন, শিশু বয়স থেকেই একটি ইউনিক নাম্বারের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার এবং সুবিধা নিশ্চিত করা সহজ হবে। তিনি আইনের বাধ্যবাধকতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন রয়েছে। সেই আইনে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে পরিচয়পত্র দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। তিনি আরও বলেন, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অনুসারেও ২০৩০ সালের মধ্যে প্রত্যেক নাগরিককে জাতীয় পরিচয় পত্র দিতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই এখন শিশুর জন্মের প্রথম দিন থেকেই ইউনিক নাম্বার দিয়ে এর আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে, এখন একজন নাগরিককে জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, ভোটার নম্বর, আয়কর টিন নম্বর, ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর-এধরনের অনেক নম্বর ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ইউনিক আইডি নম্বর দেয়া হলে সব ক্ষেত্রে এই একটি নম্বর ব্যবহার করে সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, একজন নাগরিক জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি নম্বর ব্যবহার করবেন এবং মৃত্যুর পরও সেই নাগরিক সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে ঐ নম্বর বাধ্যতামূলক করা হবে।
নম্বর দেয়ার পদ্ধতি : জন্মের প্রথম দিন, অর্থ্যাৎ শূন্য বয়স থেকে ১০ বছরের নীচে আর ১০ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত- এই দুই ভাগে ভাগ করে ইউনিক আইডি নম্বর দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মগহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অধিদপ্তরে শিশুর জন্ম নিবন্ধনের সময় শিশুর নাম, জন্ম তারিখ এবং পিতা-মাতার নাম দিতে হয়। এখন থেকে এরসাথে পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিতে হবে। শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন অধিদপ্তরে এসব তথ্য দিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
ব্রিগেডিয়ার ইসলাম বলেছেন, জন্ম নিবন্ধন অধিদপ্তরই সারাদেশে এই আবেদন গ্রহণ করবে। এই অধিদপ্তরের সার্ভারের সাথে আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যভাণ্ডারের সার্ভার যুক্ত করে দেয়া হবে। জন্ম নিবন্ধন অধিদপ্তর শিশু তথ্যগুলো আমাদের সার্ভারে পাঠাবে। এর ভিত্তিতে আমাদের সার্ভার জেনারেটর একটা নম্বর প্রস্তুত করে তা পাঠাবে। এটিই হবে ইউনিক নাম্বার। তিনি উল্লেখ করেছেন, এই নম্বরটি মানুষ তৈরি করবে না। নম্বরটি সার্ভার জেনারেটর এলগরিদমের মাধ্যমে তৈরি করে দেবে। শিশুর পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বরের ভিত্তিতে তথ্য যাচাই করে সার্ভার জেনারেটর ইউনিক নম্বরটি তৈরি করবে।
১০ থেকে ১৭ বছরের জন্য : কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০ বছর পুরো হওয়ার পর কোন শিশু যখন ১১ বছরে পা দেবে, তখন তার বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে ইউনিক নাম্বারের সাথে যুক্ত করা হবে। বায়োমেট্রিক তথ্য হিসাবে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও চোখের আইরিশের তথ্য নেয়া হবে এবং ছবি তোলা হবে। এসব তথ্য ইউনিক নম্বরের সাথে যুক্ত করে ১০ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত বয়সীদের লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয় পত্র দেয়া হবে। কিন্তু তারা ভোটার হবে না। তথ্য ভাণ্ডারে সেভাবেই তথ্য থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় ত্রুটি, স্বীকার করল সংস্থা
পরবর্তী নিবন্ধদেশে করোনায় মৃত্যু ছাড়াল সাড়ে ৬ হাজার