চরিত্র

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

ছেলেবেলা হতে চরিত্র কথাটি শুনে আসলেও এ-পর্যন্ত কথাটির আসল অর্থ কি তা আমি বুঝতে পারলাম না। তরুণ বয়সে একবার আমি আবেগময় ভাষায় একটি মেয়েকে আমার ভালোবাসার কথা লিখেছিলাম। আমার দুর্ভাগ্য চিঠিটা গিয়ে পড়লো তার বাবার হাতে। তিনি আমাকে চিনতেন। একদিন আমাকে তাঁর বাসায় ডেকে নিয়ে আমার লেখা সেই চিঠিটি দেখিয়ে বললেন, তুমি যে এতো চরিত্রহীন তা আমি আগে জানতাম না। আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে আসলাম। এই অপমানের কথা আজো ভুলিনি। আমার মাথায় এখনো ঘুরপাক খায় চরিত্রহীন কথাটি। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় চরিত্র ছাড়া মানুষ আছে কী? সাধুব্যক্তির যেমন চরিত্র রয়েছে তেমনি রয়েছে অসাধু ব্যক্তিরও। একজন মানুষের তাই চরিত্র থাকতেই হবে। অনেকে আবার এটাকে ইংরেজিতে বলে ‘ক্যারেকটার লেস’। ক্যারেকটার কি করে লেস হয় তা আমি বুঝিনা। আমি আরো বুঝিনা চরিত্রবান কথাটিও। আমরা সাধারণত যারা সৎ তাদের চরিত্রবান বলে থাকি। কিন্তু আমি মনে করি চরিত্র কথাটির সাথে হীন এবং বান যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। চরিত্র শুধু চরিত্রই। এটা বানও নয়, হীনও নয়। চরিত্রহীন মানুষ না বলে বরং নষ্ট চরিত্রের মানুষ বলা যেতে পারে। চরিত্রবানের জায়গায় বলা যায় খাঁটি মানুষ। আমার একজন বন্ধু রয়েছে তাঁর প্রচুর ঘুষ খাওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি ঘুষ খান না। খুব দয়ালু। মানুষের বিপদেআপদে সবসময় এগিয়ে আসেন। করেন অর্থ সাহায্যও। কিন্তু তিনি মদখোর। মদ খান বলে পাড়ার মানুষদের কাছে তিনি একজন চরিত্রহীন মানুষ। আর আমি চরিত্রহীন হয়েছিলাম একটি প্রেমপত্র লিখবার জন্যে। আমি বলবো মানুষের চরিত্র নষ্ট হতে পারে কিন্তু কখনো হীন হয় না। তবে পরিবর্তন হয়। আমরা তো নাটক দেখি। চরিত্রহীন নাটক হয় কী? চরিত্র রয়েছে পশু-পাখিরও। আমরা তাই একটি পশুকেও চরিত্রহীন বা চরিত্রবান বলতে পারি। ইচ্ছে করলেই বলতে পারি আমার পোষা বাঘা নামের কুকুরটি খুব চরিত্রবান। আমরা দুষ্ট চরিত্রের গোরু যেমন দেখি তেমনি দেখি শান্তশিষ্ট গোরুও। বাঁদর সবসময় বাঁদরামি করে। তার চরিত্রের বৈশিষ্টই হলো বাঁদরামি করা। মোরগের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হলো ভোরবেলা উঠে ডাক দেওয়া। কুকুরের চরিত্র হলো ঘেউ ঘেউ করা। শেয়ালের চরিত্র হলো হুক্কা হুয়া করা। চরিত্রহীন মানুষ যদি থাকে তবে রয়েছে চরিত্রহীন গোরু-ছাগলও। কৈশোরে খুব উপন্যাস পড়তাম। উপন্যাস পড়তে হতো লুকিয়ে লুকিয়ে। বড়রা মনে করতেন ছোটরা উপন্যাস পড়লে চরিত্রহীন হয়ে যাবে। শরৎচন্দ্রের ‘চরিত্রহীন’ বইটি পড়েছিলাম ভয়ে ভয়ে।
সবচেয়ে নিরাপদ হলো মানুষকে এক নম্বরী বা দুনম্বরী বলা। আমার বলতে দ্বিধা নেই যে আমি একজন দুনম্বরী মানুষ। এখনো এক নম্বর খাঁটি সরষের তেল হতে পরিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করুন
পরবর্তী নিবন্ধআমি নদ বলছি