চন্দনাইশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

শঙ্খ নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | রবিবার , ৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৮:৪৮ অপরাহ্ণ

গত পাঁচ দিনের বর্ষণে চন্দনাইশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় শঙ্খনদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করার আশংকা রয়েছে। ফলে নদের উপকূলবর্তী দোহাজারী পৌরসভা, বৈলতলী, বরমা, বরকল, সাতবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভয়াবহ বন্যা আতংকে রয়েছে।

উপজেলার নিম্নাঞ্চল সমূহের বিস্তীর্ণ বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে রয়েছে। এতে ক্ষেত নষ্ট হয়ে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় আউশ ধানের বীজতলাও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাশিমপুর বড়পাড়া পাঠানীপুল এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক ডুবো ডুবো অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় রাতে মহাসড়ক ডুবে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়কগুলো ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন আজ রবিবার (৬ আগস্ট) বিকেলে শঙ্খনদের তীরে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসায় শঙ্খনদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানির তীব্রতা বাড়ছে, পাশাপাশি রয়েছে জোয়ারের প্রভাবও। ফলে যেকোনো মুহূর্তে পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করবে। এতে পুরো উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে।

উপজেলা কৃষকলীগ সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী জানান, দোহাজারী পৌরসভার উল্লাপাড়া, ঈদপুকুরিয়া, খানবাড়ি, সরকারপাড়া, জামিজুরী, চাগাচর, লোকমানপাড়ার বেশ কয়েকটি পরিবার ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে।

এছাড়াও দোহাজারী পৌরসভার রায়জোয়ারা, দিয়াকুল, কিল্লাপাড়া, জামিজুরী, পূর্ব দোহাজারী, চন্দনাইশ পৌরসভা, বরকল, বরমা, কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, হাশিমপুর, সাতবাড়িয়া ও ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের কাম-খেয়ালীপনায় চলতি বর্ষায় দোহাজারী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড উল্লাপাড়ার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রেললাইন নির্মাণ করলেও পানি নিষ্কাষনের কোনো ব্যবস্থাই নেই। পানি চলাচল বন্ধ হওয়ায় এ গ্রামের সড়কগুলোও পানিতে ডুবে রয়েছে। নিত্য কাজে বের হওয়া মানুষদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।

এদিকে, বৃষ্টির পানি বাধাগ্রস্থ হয়ে উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

দোহাজারী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড সোনার বর বটতল-নাসির মাস্টার বাড়ি সড়কের মাঝখানে ছিঁড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর এসএম পহর উদ্দীনসহ স্থানীয় জনগণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে যোগাযোগ সচল করে। চন্দনাইশ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বরুমতি খালের ব্রীজ অংশে কার্পেটিং সড়কের নিচে মাটি সরে গেছে।

শঙ্খ নদের তীরে উৎপাদিত বর্ষাকালীন সবজি ঢেঁড়শ, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, চিচিংগা, করলা, তিত করলা, শসা, মুলা, বেগুন, ধনেপাতা ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।

উপজেলার কোথাও কোথাও বিস্তীর্ণ আউশের বীজতলাও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।

শঙ্খচরের কৃষক মো. হাসান, মো. মানিক, মো. মারুফ জানান, ক্ষেতে পানি জমলে সবজি গাছ নষ্ট হয়ে যায়। ইতিমধ্যে নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেতগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।

অতি বৃষ্টিতে মাটি নরম হওয়ায় উপজেলার অনেক স্থানে বড় বড় গাছও হেলে পড়ছে। গাছবাড়িয়া-বরকল-আনোয়ারা সড়কের চন্দনাইশ পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ড মধ্যম চন্দনাইশ গাবতল এলাকায় বিশাল একটি গাছ উপড়ে পড়ে স্থানীয় মুজিবুর রহমানের দোকানের উপর। এতে ওই দোকানের চালের টিন ও অন্যান্য মালামালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন জানান, উপজেলার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বৃষ্টির পানি জমে সবজি ও আউশের বীজতলা ডুবে রয়েছে। এই অবস্থায় বৃষ্টি থেমে গেলে ডুবে যাওয়া সবজি ও আউশের বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে কৃষকদের।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসান আহসানুল কবির জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এবং শঙ্খ নদের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করলে উপজেলার বরকল বরমাসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মৎস্য প্রজেক্ট ভেসে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে ফের গাছ ভেঙে যান চলাচল ব্যাহত
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পথচারীকে রক্ষা করতে গিয়ে অটোরিক্সা চালক আহত