চট্টগ্রাম থেকে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির ১০ হাজার নেতাকর্মী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা ছিল না। এরপরও স্বপ্রণোদিত হয়ে দলের গণসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের চট্টগ্রামের নেতারা। দলটির নেতাকর্মীদের দাবি, চট্টগ্রামের তিনটি সাংগঠনিক জেলা অর্থাৎ মহানগর এবং উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। যাদের সিংহভাগই ঢাকা পৌঁছে গেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে ধাপে ধাপে নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশে রাওয়ানা হন। সর্বশেষ গত রাতেও অনেকে সমাবেশের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কথা দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, আজ শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রথমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেয়। পরে ঘটনার পর গতকাল গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয়।
বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য জেলার নেতকর্মীদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। বিএনপির লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিভাগের আওতাধীন জেলার নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ করবে। এর আগে ২০১২ সালের ১২ মার্চ ঢাকায়
মহাসমাবেশ করেছিল বিএনপি। তখন কর্মসূচির নাম ছিল ‘চল চল ঢাকা চল’। ওই কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার জন্য সমন্বয় করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে পৃথক ৪৫টি কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের সমাবেশের জন্য এমন কোনো কমটি করা হয়নি। অর্থাৎ সারা দেশের তৃণমূলের কর্মীদের অংশগ্রহণ নিয়ে আগ্রহী ছিল না কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরপরও নিজ উদোগে চট্টগ্রামের বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দিচ্ছেন।
আজকের সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ বহু নেতাকর্মী। গতরাতে ডা. শাহাদাত মুঠোফোনে দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগর কমিটির প্রায় সবাই এসেছেন। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড থেকেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতাকর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগে এসেছেন। সমাবেশে অংশ নেয়ার বিষয়ে আমাদের প্রতি কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা ছিল না। তারপরও সবাই আবেগের টানে ছুটে আসেন। এর কারণ হচ্ছে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ বহু নেতাকর্মীকে গুলি করেছে। সর্বশেষ মহাসচিবকে গ্রেপ্তার করল। সরকার বার বার চেষ্টা করেছে সমাবেশ যেন সফল না হয়। ফলে সবমিলিয়ে সবার মধ্যে ইমোশন কাজ করেছে। তাই সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীরা বাধা পেরিয়ে যোগ দিচ্ছে। তিনি বলেন, গোলাপবাগ মাঠটা অপরিচিত ছিল সবার কাছে। গণতন্ত্রের যাত্রার ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে এ মাঠ সবার কাছে পরিচিত হবে। নগরসহ উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন বলেও দাবি করেন ডা. শাহাদাত।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, দক্ষিণ জেলার আওতাধীন প্রতিটি থানা ও পৌরসভা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার নেতকর্মী সমাবেশে যোগ দেবে। সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা ছিল না। অন্যান্য বিভাগগুলোতে যেভাবে সমাবেশ হয়েছে ঠিক একইভাবে রাজধানীতেও ঢাকা বিভাগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার সমাবেশ করতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করাই নেতকর্মীদের মধ্যে জেদ চাপে। তাই সবাই স্বপ্রণোদিত হয়ে ছুটে গেছে।
উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম বলেন, প্রতিটি থানা থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সবাই দুয়েকদিন আগেই চলে গেছেন।
সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য গত মঙ্গলবার থেকে রাজধানীতে অবস্থান করছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খানসহদলটির বহু নেতাকর্মী। গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে রাশেদ খান আজাদীকে বলেন, সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমাদের চার থেকে পাঁচশ নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছে। আরো অনেকে আসার পথে রয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যে আগ্রহ তার প্রতিফলন ঘটবে এ সমাবেশে। তাই সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা না থাকার পরও সবাই স্বপ্রোণোদিত হয়ে যোগ দিচ্ছেন।
মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. ইদ্রিস আলী আজাদীকে বলেন, ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশটা হচ্ছে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সমাবেশ। চট্টগ্রাম থেকে এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য সাংগঠনিক কোনো নির্দেশনা নেই। তারপরও মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ঢাকায় গেছেন। সিনিয়র নেতৃবৃন্দর নিজ দায়িত্বেই কর্মী সমর্থকদেরা নিয়ে ঢাকায় গেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলজার বেগম বলেন, দলের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও আমরা নিজ দায়িত্বে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঢাকায় এসেছি। চট্টগ্রাম থেকে মহিলা দলের দুই-তিনশ নেতাকর্মী এসেছে। শুক্রবার (গতকাল) কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বের হওয়ার পর পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিয়েছে। আমরা সমস্ত বাধা ডিঙিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছি।
জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মীদের সংঘটিত করতে গত ২২ আগস্ট থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করে পালন করে আসছে বিএনপি। এর মধ্যে ২২ আগস্ট ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করেছিল দলটি। ওইসময় তাদের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল বলেও দাবি করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপর ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয় গণসমাবেশ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়ে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণ সমাবেশ শেষ হবে। ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও রাজশাহী বিভাগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি অর্ধেক পরাজিত : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধমিত্রবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে