চট্টগ্রামে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ দ্রুত শেষ করা চাই

| রবিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করার কাজ শুরু হচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে। চট্টগ্রামবাসীর জন্য এটা নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক সংবাদ। গতকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘শুরু হচ্ছে ১ লাখ প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ’ শীর্ষক সংবাদে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ের অভাবনীয় সাফল্যের পর দ্বিতীয় পর্বে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ২৪১ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে এক লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে প্রথম পর্যায়ে এলাকা ভিত্তিক গ্রাহকদেরকে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হলেও এবার আর তা করা হচ্ছে না। দ্বিতীয় পর্যায়ে নগরীর যে কোন এলাকার গ্রাহকই অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটার কানেকশন নিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সিরিয়াল অনুযায়ী এক লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি আমরা লিখেছিলাম, ‘গ্যাসের প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজে গতি আনতে হবে’ শীর্ষক সম্পাদকীয়। এর আগে ২৩ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘অপেক্ষা আর ফুরোয় না’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে, দেশে গ্যাসের প্রি পেইড মিটারিং সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হলেও গত ৫ বছরে তা বড় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। দেশের নগণ্য সংখ্যক গ্রাহককে বহুল প্রত্যাশার প্রি পেইড মিটারিং সিস্টেমের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে অন্যদের অপেক্ষা আর ফুরোয় না। সংবাদে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে প্রায় ছয় লাখ আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রিুপেইডের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৫ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহককেই সরকারের নির্ধারিত বাড়তি গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে নতুন করে এক লাখ প্রি পেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকার প্রকল্প কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু প্রকল্পটির কনসালটেন্ট নিয়োগই সম্পন্ন হয়নি। ইতোমধ্যে একবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ভেস্তে গেছে।
ঢাকা অঞ্চলে সাড়ে তিন লাখের মতো গ্রাহককে প্রি পেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। তিতাসে আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তার কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যান্য কোম্পানিগুলোর অবস্থাও একই। সিলেটের জালালাবাদ, কুমিল্লার বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চলসহ সবগুলো কোম্পানি প্রি পেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করলেও কোনটিই পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
এতে করে চট্টগ্রামের প্রায় সাড়ে ৫ লাখসহ দেশের ৩৫ লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহক প্রি পেইড মিটারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সরকার নির্ধারিত বাড়তি দরে প্রতি ডাবল চুলা বাবদ ৯৭৫ টাকা এবং সিঙ্গেল চুলা বাবদ ৯২৫ টাকা করে বিল পরিশোধ করছেন। অথচ ৫/৭ জনের একটি পরিবারে আবাসিক চুলায় পুরো মাসে কোনভাবেই ৬০০ টাকার বেশি গ্যাস ব্যবহৃত হয় না। প্রি পেইড মিটারের সুবিধা যারা পেয়েছেন তাদের কোনো কোনো পরিবার ৪শ’ টাকার গ্যাস দিয়ে পুরো মাসের রান্নাবান্না সারছেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি চুলায় বাড়তি ব্যয় হয় গড়ে ৩শ’ টাকা। এ হিসাবে সারাদেশে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়তি বিল দিতে হয়। ছয়টি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিই এই বাড়তি টাকা আদায় করে আসছে।
প্রিপেইড মিটার সিস্টেম চালু হওয়ার পর দেখা গেছে ব্যাপক উপকার হয়েছে গ্রাহকের। লাভবান হয়েছে জাতি। বলা যেতে পারে, দেশে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করার ফলে গৃহস্থালিতে গ্যাস ব্যবহারে গ্রাহকরা সচেতন হয়েছে। দুর্ঘটনা কমেছে। আমরা দেখেছি এতে গ্যাসের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার, গ্রাহক এবং সার্বিকভাবে দেশ উপকৃত হয়েছে। এতোসব সুবিধা থাকার পরও দেশে প্রিপেইড গ্যাস মিটারের পরিমাণ খুবই কম। তাই প্রিপেইড মিটার সকলের কাছে বড় প্রত্যাশার। অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে প্রিপেইড মিটার কানেকশন নেওয়ার যে সুযোগ কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। আমরা তার দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে