গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল : লাতিন আমেরিকার আদর্শ

| রবিবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

চিলির নোবেলজয়ী কবি এবং নারী ও শিশু অধিকার রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ কর্মী গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল। লাতিন আদর্শগত অনুপ্রেরণার প্রতীক।
১৮৮৯ সালের ৭ এপ্রিল চিলির ভিকুনার এক দরিদ্র পরিবারে মিস্ত্রালের জন্ম। প্রকৃত নাম লুসলা গোডি। মিস্ত্রালের যখন তিন বছর বয়স তখন তাঁর বাবা তাঁদের ছেড়ে চলে যান। মা আর বড় বোনের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন মিস্ত্রাল। বোন এমিলিনা গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর কাছেই মিস্ত্রালের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। অসুস্থতার কারণে মা কোনো কাজ করতে পারতেন না। পরিবারে দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গি। তাই মাত্র পনেরো বছর বয়সে মিস্ত্রাল গ্রামের আরেকটি স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তাঁর কাব্য চর্চার শুরু এ সময় থেকেই। পরিণত বয়সে কাব্যচর্চার পাশাপাশি চিলির দরিদ্র জনগণ বিশেষ করে শিশুদের উন্নয়নের কাজে নিবেদিত হন। এ সময় তিনি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। চিলির সংস্কৃতি ও কূটনীতি মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন মিস্ত্রাল। মিস্ত্রালের কবিতায় প্রবলভাবে এসেছে ভালোবাসা, বিশ্বাস, বিষাদ আর মৃত্যুর অবিমিশ্র বন্দনা। অল্প বয়সেই বিভিন্ন সম্পর্ক আর বাস্তবতার টানাপোড়েন, বিশেষ করে আপন কিছু মানুষের অকাল মৃত্যু তাঁকে প্রবলভাবে ভারাক্রান্ত করে তোলে। ১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয় মিস্ত্রালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মৃত্যুর জন্য সনেট’। গ্রন্থটি দারুণ সাড়া ফেলে এবং মিস্ত্রাল জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। শিক্ষা বিষয়েও একাধিক প্রবন্ধ লেখেন তিনি। কবি ও শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে। শিক্ষা বিষয়ে বক্তৃতা দেবার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে তিনি বিভিন্ন দেশে যান, গঠন করেন শিক্ষা কাউন্সিল। দরিদ্র শিশুদের জন্য বিশ্বব্যাপী তহবিল গঠনে তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক নীতিমালা প্রণয়নে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। মিস্ত্রালের উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে: ‘মৃত্যুর জন্য সনেটগুচ্ছ’, ‘নিরুদ্দেশ’, ‘সাদা মেঘ ও চিলির গান’, ‘নারীর জন্য পাঠ’, ‘শিশুর জন্য গান’, ‘চোলাইখানা’ প্রভৃতি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৫৭ সালের ১০ জানুয়ারি প্রয়াত হন মিস্ত্রাল। চিলিতে প্রতিষ্ঠিত গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল ফাউন্ডেশন যুগ যুগ ধরে মাতৃভূমি চিলির দরিদ্র ও অনুন্নত শিশুদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধ হোক শিশুশ্রম
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস