গোপাল হালদার : সংস্কৃতির আলোকে জীবনের অন্বেষক

| শনিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ গোপাল হালদার বিশেষভাবে পরিচিত কমিউনিস্ট আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ বামপন্থী চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক হিসেবে। বিশ শতকের কথাসাহিত্য, রাজনীতি ও সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস গোপাল হালদারকে ছাড়া অপূর্ণ। তিনি ছিলেন একাধারে বুদ্ধিপ্রধান কথাকার, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আজ তাঁর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।

গোপাল হালদারের জন্ম ১৯০২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি বিক্রমপুরের বিদগাঁও গ্রামে। শিক্ষা জীবনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ ও আইন শাস্ত্রে বি.এল ডিগ্রি অর্জন করে কিছুকাল নোয়াখালিতে আইন ব্যবসা শুরু করেন গোপাল হালদার। কিন্তু মানসিক স্বস্তি খুঁজে পেলেন না এ পেশায়। যুক্ত হলেন পত্রিকা সম্পাদনায়। অধ্যাপনাও করলেন কিছুকাল। তখন পরাধীনতার গ্লানি রক্তে বিপ্লবের নেশা ধরিয়েছে। ১৯৩২ সালে, তিনি যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব বিভাগে গবেষণা সহকারী, ব্রিটিশবিরোধী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় পাঁচ বছর দশ মাস কারাবরণ করেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবেও কারাগারে থাকতে হয়েছে ১৯৪৯ সালে। তাঁর রচিত তিনটি রাজনৈতিক উপন্যাস ‘একদা’, ‘অন্যদিন’, এবং ‘আর একদিন’ ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ভাবাদর্শেরই প্রতিচ্ছবি। সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁর অগাধ মনীষা আর প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সংস্কৃতির রূপান্তর’, ‘বাঙালি সংস্কৃতির রূপ’ ও ‘বাঙালি সংস্কৃতি প্রসঙ্গ’ গ্রন্থগুলোতে। সংস্কৃতির রূপান্তর গ্রন্থটি মার্কসবাদী দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের আলোকে রচিত মানব সংস্কৃতি বিকাশের পরিচয়বাহী।

এছাড়া ইতিহাস বিষয়ে তাঁর ব্যাপক অধ্যয়ন, গভীর চিন্তাশীলতা ও কুশলী রচনার ছাপ পড়েছে দুই খণ্ডে রচিত ‘বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা’, ‘ইংরেজি সাহিত্যের রূপরেখা’ ও ‘রুশ সাহিত্যের রূপরেখা’ গ্রন্থে। ‘রূপনারাণের কূলে’ লেখকের আত্মজীবনীমূলক চমৎকার একখানা গ্রন্থ। এছাড়া একটি গল্পগ্রন্থ ও বারোটি উপন্যাস লিখেছেন তিনি। সমকালীন সমাজ বাস্তবতা ব্যঞ্জনাময় অভিব্যক্তি পেয়েছে তাঁর গল্প ও উপন্যাসে। ১৯৯৩ সালের ৩ অক্টোবর ৯১ বছর বয়সে বিরলপ্রজ এই মনীষীর জীবনাবসান ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম দিনেই ব্যাটিং জড়তাটা চোখে পড়ল ক্রিকেটারদের
পরবর্তী নিবন্ধসজিবদের লক্ষ্য সুযোগটাকে কাজে লাগানো