খেয়াল খুশিমত ভাড়া আদায়

শহরজুড়ে হাজারো অবৈধ সিএনজি টেক্সি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর জামাল খান থেকে জিইসি মোড়। সর্বোচ্চ দূরত্ব তিন কিলোমিটার। সিএনজি টেক্সিতে নিয়ম মানলেই ৬০ টাকার বেশি ভাড়া হওয়ার কথা নয়। অথচ ১২০ টাকার কমে কোনো সিএনজি টেক্সিই সেখানে যায় না, যেতে চায় না। এভাবে নগরীতে চলাচলকারী বৈধ-অবৈধ হাজার বিশেক সিএনজি টেক্সি প্রতিদিনই অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মানুষের পকেট থেকে। টেক্সি ভাড়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মাসে অন্তত ৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে টেক্সি চালকেরা। মিটারে ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বহু উদ্যোগ নেয়া হলেও সবই মুখ থুবড়ে পড়েছে। হাজারো অবৈধ সিএনজি টেক্সি শুধুমাত্র পুলিশের ‘অভয়’ নিয়ে নগরীতে চলাচল করছে। ভাড়ার ব্যাপারে এদের নিয়ন্ত্রণ করলে নগরীর লাখো মানুষের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হত বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে। সূত্র জানায়, নগরীতে সিএনজি চালিত বৈধ টেক্সির সংখ্যা ১৩ হাজার। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী টেক্সির সংখ্যা কমপক্ষে ত্রিশ হাজার। শহরের রাস্তায় কত গাড়ি চলাচল করছে তার কোনো হিসেব কারো কাছে নেই। ‘গ্রাম’ টেক্সিও অবাধে চলাচল করে শহরে। শহরের অলিগলি রাজপথ জুড়ে চলাচলকারী হাজারো টেক্সির উপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব টেক্সি রেজিস্ট্রেশন করা হলে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব পেত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে টেক্সির রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রয়েছে বহু আগ থেকে। রেজিস্ট্রেশন না থাকলেও শহরে হরদম নতুন টেক্সি নামছে। যা অবাধে চলাচলও করে।
রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো মাথাব্যাথা না থাকলেও এসব টেক্সি যেন নগরবাসীর পকেট কাটার মিশনে নেমেছে। তাদের ভাড়া নৈরাজ্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরবাসীর। ১৬ বছর আগে ২০০৫ সালে ১ জুনের মধ্যে চট্টগ্রামের সকল ফোর স্ট্রোক টেক্সিতে মিটার সংযোজনের জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছিল। পরবর্তীতে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। মিটারও সংযোজন করা হয়েছিল। কিন্তু ওসব মিটারের কোনো অস্থিত্ব নেই বর্তমানে। নগরীর টেক্সিগুলো এখন নিজেদের মত করে চলাচল করে। ভাড়াও আদায় করা হয় নিজেদের মত।
নগরীর জামাল খান এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন গতকাল দৈনিক আজাদীর সঙ্গে আলাপকালে জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নগরীর সাধারণ মানুষ সিএনজি টেক্সিচালকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সিএনজি টেক্সিতে চলাচল করেন এমন সাধারণ মানুষের অবস্থা খুবই বেহাল। ৬০/৭০ টাকায় যাতায়ত করা উচিত এমন জায়গায় যেতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হাঁকা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতিটি মোড়ে কয়েকজন সিএনজি চালক গাড়ি নিয়ে অবস্থান করেন। একজন যেই ভাড়া হাঁকেন অন্যরা তার থেকে কমেন না। এতে করে দরদাম করে যে গাড়িতে চড়ব সেই সুযোগও নেই। একেবারে সিন্ডিকেট করে জিম্মি করে ফেলা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, নগরীতে চলাচলকারী টেক্সিগুলো প্রতিদিন অন্তত দুই কোটি টাকা বাড়তি হাতিয়ে নিচ্ছে। এক একটি টেক্সি যদি পুরোদিনে ৭শ টাকা বাড়তি হাতায় তাহলে এই সংখ্যা দুই কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। প্রতি মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ কোটি টাকারও বেশি। সিএনজি টেক্সির ভাড়া নিয়ে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণে পুলিশের একটি বড় ভূমিকা থাকার কথা থাকলেও তা নেই বলেও সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল নগর ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলে বলেন, আসলে ভাড়া নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। এটি সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকার যদি মিটার সংযোজন করে তাহলে মিটারে ভাড়া আদায় হবে। এখন মিটার না থাকার ফলে দরদাম করে মানুষ টেক্সিতে চড়েন। এতে পুলিশ বা অন্য কারো কিছু করার সুযোগ থাকে না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আগে ছয়টি কোম্পানিকে মিটার সংযোজনের কাজ দেয়া হয়েছিল। তারা অন্তত দশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু মিটারে কোনোদিন কোনো টেক্সি চলাচল করেনি।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল কয়েকজন সিএনজি চালক বলেন, আমরা মিটার লাগিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে সেই মিটার নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর চুক্তি মাফিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কারো কাছ থেকে জোর করে ভাড়া আদায় করা হয় না। দরদাম করেই মানুষ টেক্সিতে চড়ে। তারা বলেন, সিএনজি গ্যাসের দাম বেড়েছে। টেক্সির জমা বেড়েছে। এতে করে ভাড়া তো বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফোন করে ৪ মিনিটেই খতিয়ানের আবেদন
পরবর্তী নিবন্ধচকবাজারে দুই কিশোর গ্যাং লিডার গ্রেপ্তার