কোরবানিকে সামনে রেখে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

পশুখাদ্যের দাম চার বছরে দ্বিগুণ

আনোয়ারা প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২৮ জুন, ২০২২ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

গোখাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এই গোখাদ্যের দাম বেড়েছে চার বছরে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ভূষি, সয়াবিন, ক্যাটল বুস্টার, গম ইত্যাদির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গরুকে চাহিদার তুলনায় কম খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া নিয়ে শংকিত কুরবানি পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত খামারিরা।

আনোয়ারা উপজেলা ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সহ -সভাপতি নুরুল হুদা বলেন, গত চার বছরের গোখাদ্যের দাম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালে সয়াবিন খৈলের ৫০ কেজি বস্তার দাম ছিল ১৭০০টাকা, এখন তা ৩৪০০ টাকার বেশি। ৩৫ কেজি ওজনের গমের ভুষির বস্তা ২০১৯ সালে ছিল ৭৮০ টাকা। রাইশ পলিশ ২০১৯ সালে ৫০ কেজি বস্তা ছিল ৭০০ টাকা, এখন তা ১৬০০ টাকা। মসুর ভূষি ৩০ কেজি বস্তা ২০১৯ সালে ছিল ৪৩০ টাকা, এখন তা ১১০০ টাকা। সরিষার খৈল ২০১৯ সালে ৬৪ কেজি বস্তার দাম ছিল ১৬০০ টাকা, এখন তা ৩৩০০ টাকা। ভূট্টা ৫০ কেজি বস্তা ২০১৯ সালে ছিল ৮২০ টাকা, এখন তা ১৮৫০ টাকা। মুগভূষি প্রতি বস্তা ৪০ কেজি ২০১৯ সালে ছিল ৬৮০ টাকা, এখন তা ১৬০০ টাকা। মটরভূষি ১৮ কেজি বস্তা ২০১৯ সালে ছিল ৩৪০ টাকা, এখন তা ১২০০ টাকা।

বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মানুষের খাওয়ার চালের চেয়েও খুচরা মূল্যের গো-খাদ্য দাম বেশি। বাজারে ১ কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অপরদিকে ১ কেজি গো-খাদ্য গমের ভূষি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকায়।

আনোয়ারা বরুমচড়া গরু খামারি মো. খোরশেদ আলম জানান, আসন্ন কুরবানির জন্য ৩০টিরও বেশি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। বাজারে চালের চেয়ে গবাদিপশুর খাদ্যের দাম বেশি। এছাড়া শ্রমিকসহ অন্যান্য খামার ব্যবস্থাপনার খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বর্তমানে খামার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আগে যেখানে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার খরচ হতো সেখানে এখন ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আনোয়ারা উপজেলায় দেড়-দুই মাস আগে ৩৭কেজি ভূষির প্রতি বস্তা ১২-১৩ শত টাকা মূল্য ছিল, এখন সেটি ১৮শ থেকে দুই হাজার টাকা হয়েছে। ৩৭ কেজির কেটল বুস্টার প্রতি বস্তার মূল্য ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা, এখন সেটি ১২শ ৫০ টাকা বস্তা। ৩৪ কেজি গমের বস্তা ছিল ১১শ টাকা বর্তমানে হয়েছে ১৪শ টাকা। লবণ প্রতি ৫০ কেজির বস্তা আগে ছিল ৫৫০ টাকা, এখন হয়েছে ৭৫০ টাকা।

পশুর খুচরা খাদ্য বিক্রেতা আবুল হোসেন জানান, খাদ্যের সঙ্কট নেই। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। কৃষকরা এখন আগের তুলনায় খাদ্য কম কিনছেন। পাইকাররা জানান, দেশে গম উৎপাদন কম হয়। কয়েক মাস যাবত বিদেশ থেকেও গম আমদানি কম হচ্ছে। তাই বয়লার কুড়া (ভূষি) ও বুস্টার উৎপাদন কম হওয়ায় ভূষিসহ অন্যান্য খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে।

আনোয়ারা ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তানভীর হাসান বলেন, গবাদিপশু লালন পালন ও মোটাতাজাকরণে খামারীরা সয়াবিন খৈল, গমের ভূষি, রাইস পলিশ, মটর ভূষি, সরিষা খৈল, ভূট্টা, মুগভূষি গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আর বর্তমানে এসব খাদ্য গত ৩ বছরে ৪ ধাপে বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে।

বিলপুর গ্রামে কথা হয় কাঁচা ঘাস সংগ্রহ করাতে আসা আবু তালেবের সাথে। তিনি বলেন, তার বাড়িতে দুটা গরু ও একটা ছাগল আছে। তিনি অন্যের কাছ থেকে পাঁচ মণ খড় কিনেছিলেন ৮শ টাকায়। বর্তমানে সেই খড়ের বাজার মূল্য প্রতি মণ ৩০০/৩৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই তিনি বিকল্প খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন সকালে কাঁচা ঘাস সংগ্রহ করেন।

আনোয়ারা উপজেলা ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী বলেন, বিদেশ নির্ভরতা কাটিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গরুর চাহিদা মেটানোর যে ঘোষণা সরকারের আছে তার সাথে গো-খাদ্যের বাজারে চলমান অস্থিরতা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। যার কারণে আমরা খামারিরা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছি। আমরা সরকারের কাছে দাম কমানোর দাবি জানাচিছ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নইফা বেগম বলেন, আমরা ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য বিক্রি করতে নির্দেশনা দিয়েছি।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, গো-খাদ্যের বাজারে দামের অস্থির বিষয়ে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি, আশা করি সরকার এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দিবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত ৬৬ জন
পরবর্তী নিবন্ধসাভারে ছাত্রের বেধড়ক পিটুনিতে আহত শিক্ষকের মৃত্যু