বাবারা ভালো থাকিও, ভালো রাখিও, দোয়া নিও
বাবা ছাত্রলীগার, আমার আন্তরিক দোয়া গ্রহণ করিও। ‘আশা করি ভালো আছো’ বলিতে পারিতেছিনা কারণ, সংবাদমাধ্যমে তোমাদের কার্যকলাপের খবর পড়িতে পড়িতে, দেখিতে দেখিতে বুঝিতে পারিতেছি তোমরা ভালো নাই। নিজেদের মধ্যে নিজেরা মারামারি করিতে করিতে তোমরা ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত এবং বিধ্বস্ত হইয়া পড়িয়াছো। আর কাঁহাতক? সেই ২০০৯ সাল হইতে শুরু করিয়া এই চৌদ্দ বছরে এত এত কলহ-বিবাদ করিয়াছো যে, তোমাদের চির শত্রু জামায়াত-শিবিরকে ঠেকাইবার চিন্তাও তোমরা করিতে পারো নাই। অবশ্য চিন্তা করিবে কী, তাহাদের সহিত লড়িবার মতো তাগৎ তো তোমাদের নাই। আসলে তাহা বলাও ঠিক হইল না। তোমরা শিবির ঠেকাইবে কি? নিজেরাই শিবিরে পরিণত হইয়াছো। গত চৌদ্দ বছরে শিবির-জামায়াত আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি করিতে পারে নাই তোমরা তাহা পোষাইয়া দিয়াছো। শেখ হাসিনা যখন দেশ ও জাতি লইয়া ভাবিতেছেন, দলের ভিতরে লুকাইয়া থাকা খোন্দকার মোশতাকদের, দেশের অভ্যন্তরের ও বহির্শত্রুর ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করিতে দিনাতিপাত করিতেছেন সেই সময় তোমরা সকল কিছুকে উপেক্ষা করিয়া নিজেদের পদ-পদবি লইয়া ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধ চালাইয়া যাইতেছো।
মহামারী লইয়া তোমাদের কোনো চিন্তা নাই, রোহিঙ্গা সমস্যা লইয়া তোমাদের কোনো চিন্তা নাই, অথর্নৈতিক মন্দাভাব লইয়া কোনো চিন্তা নাই, এমনকি আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ কীভাবে মোকাবিলা করিবে, কীভাবে জিতিতে পারিবে তাহা লইয়াও তোমাদের কোনোরূপ ভাবনা নাই, পরিকল্পনা নাই। পরাশক্তিগুলির ভূরাজনৈতিক খেলা প্রধানমন্ত্রী কীভাবে মোকাবিলা করিতেছেন এবং তাহা করিতে গিয়া কীরূপ চাপ সামলাইয়া দেশকে নেতৃত্ব দিয়া যাইতেছেন তাহা নিয়াও তোমাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নাই। তোমরা কেবলই নিজেদের মধ্যে ক্ষুদ্র গণ্ডিতে একে অপরের মুণ্ডু চিবাইতে তৎপর রহিয়াছো।
গত কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের একটি সমাবেশে উপস্থিত হইয়া প্রধানমন্ত্রী অনেক উপদেশ প্রদান করিয়াছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হইতেছে সেইসব উপদেশের বিন্দুবিসর্গও তোমাদের মগজে ধারণ কর নাই। সেই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের বক্তৃতা আমি দেখিয়াছি, শুনিয়াছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো। সেদিন দেখিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আগ্রহ নিয়া সাদ্দামের সেই বক্তৃতা শ্রবণ করিতেছিলেন। তাহা দেখিয়া আমার মনে হইতেছিল সেই সময় তাহার স্মৃতিপটে তাহার বাবা জাতির পিতার ছবি ভাসিয়া উঠিতেছিল, তাঁহার ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলের ছবি ভাসিতেছিল। তিনি আরও কী ভাবিতেছিলেন জানি না তবে আমি ভাবিতেছিলাম আহা ছাত্রলীগে যদি আরও সাদ্দাম থাকিত তাহা হইলে কতই না ভালো হইত। কিন্তু তাহা সত্য হইল না। তোমরা সকলে মিলিয়া শেখ হাসিনার মুখ কীভাবে ম্লান করিয়া দিবে সেই চেষ্টাই যেন করিতেছো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে তোমরা তোমাদের পিতামহের সম্পত্তি মনে করিয়া যাহা ইচ্ছা তাহা করিতেছো। সোমবারের পত্রিকা লিখিয়াছে, ‘নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিতদের মূল্যায়নের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে তালা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের একাংশ। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে, ফটকে তালা দেয়ায় সকালে ক্যাম্পাস থেকে চট্টগ্রামমুখী শিক্ষক বাস ছেড়ে যেতে পারেনি। এর আগে একই দাবিতে গত ১ আগস্ট ভোররাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে ও টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন চবি ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিতরা। বিক্ষোভে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।’
তোমরা ভুলিয়া গিয়াছো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এইখানে যোগ্য সকলেরই পড়িবার অধিকার আছে। তোমাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যঘাত ঘটাইতে পারো না। বিশ্ববিদ্যালয় অচল করিয়া দিতে পারো না। এই ঘটনার আগে হলের একটি কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করিয়া তোমরা দুই পক্ষ মারামারি করিয়াছো। এই ঘটনায় কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করিয়াছো, উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হইয়াছে বলিয়া পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশিত হইয়াছে। গত চৌদ্দ বছরে তোমরা নিজেদের মধ্যে অন্তত কয়েকশত মারামারির ঘটনা ঘটাইয়াছো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যেন কোনো ইতিবাচক কার্যকলাপই নাই। শুধু নেতিবাচক খবর পড়িতে হয়।
শুধু যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাহাও নয় সারাদেশে এবং অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তোমাদের কার্যকলাপ বেশিরভাগই নিন্দনীয়। গত শনিবার কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা। ভাঙচুর করিয়া ফিরিয়া যাইবার সময় তাহারা নাকি জয় বাংলা স্লোগানও দিয়াছে।
শনিবারের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হইয়াছে ‘ছাত্রাবাসে এসি লাগিয়ে থাকেন ছাত্রলীগ নেতা।’ পত্রিকা লিখিয়াছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অনেক অভিযোগ রহিয়াছে। আমরা যখন পড়াশোনা করিতাম তখন দেখিয়াছি অনেক ছাত্রের রুমে হারমোনিয়াম-তবলা থাকিত। সন্ধ্যায় বা রাতে তাহারা গানের আসর বসাইতেন। কিন্তু কাহারও রুমে এসি লাগাইবার মতো ঘটনা এই প্রথম শুনিলাম। সংস্কৃতিচর্চার ধারেকাছেও তো তোমরা নাই, হারমোনিয়াম থাকিবে কি? চট্টগ্রামের মতো রাজশাহীতেও একসময় জামায়াত-শিবিরের প্রচণ্ড দাপট ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও নগরের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিবিরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেই শিবিরকে হটাইয়া যখন ছাত্রলীগ তাহাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করিল তখন আশ্বস্ত হইয়াছিলাম যে, যাক এখন রগকাটা-গলাকাটা হইতে রেহাই পাওয়া যাইবে। কিন্তু সেই আশা মরিচিকায় পরিণত হইয়াছে। রাজশাহীতেও তোমরা একের পর এক রেকর্ড ভঙ্গ করিয়াছ। আসলে তোমরা রেকর্ড ভঙ্গ কোথায় কর নাই। সোমবারে একটি জাতীয় পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় কয়েকটি ছবি ছাপা হইয়াছে। সেই ছবিতে দেখিলাম রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতার হাতে চায়নিজ কুড়াল। এর পাশাপাশি কাহারও হাতে রামদা, কাহারও হাতে লোহার রড শোভা পাইতেছে। অথচ সোমবারে একটি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলিয়াছেন, ‘বিএনপি নেতাুকর্মীদের ওপর হামলার কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘নির্দেশনার বাইরে কেউ যদি এসব হামলায় জড়িয়ে পড়েন, আমরা কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।’ সোমবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন কাদের।
এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশনার বাইরে কেউ যদি এসব হামলায় জড়িয়ে পড়েন, আমরা কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। এখানে কেন্দ্রের কোনো নির্দেশ নেই।’ (পত্রিকার উদ্ধৃতি)।
তোমাদের কুকীর্তির ফিরিস্তি দিতে হইলে অদ্যকার পত্রিকায় আর অন্য সংবাদের স্থান হইবে না। কাজেই সেই চেষ্টা হইতে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ বলিয়া মনে করিলাম। আমার ধারণা তোমাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের জন্মের ও এই সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ইতিহাস জানো না। মনে হয় তোমাদিগকে তাহা জানাইবার প্রয়োজনও বোধ করে নাই তোমাদের বড় ভাইয়েরা, যাহাদের পিছনে পিছনে ঘুরিয়া ঘুরিয়া তোমাদের রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটিয়াছে। আসলে তাহারাও কী বলিবে? জানিলে তো বলিবে, পড়িলে তো বলিবে। তোমাদের নেতাদের সহিত বছরে কয়বার পুস্তকের দর্শন হয় তাহা কি বলিতে পারিবে? তোমাদেরও কতদিনে দেখা হয় তাহা জানিতে বড় আগ্রহ জাগিতেছে।
১৯৪৭ সালে ১৪ অগাস্ট পাকিস্তান ও ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। এর আগে বঙ্গবন্ধু কলকাতায় পড়াশোনা ও রাজনীতি করিতেন। তিনি কলকাতা ছাড়িয়া পূর্ব বাংলায় (পূর্ব পাকিস্তান) ফিরিয়া আসিলেন। আসার কয়েকদিনের মধ্যে তিনি অনুধাবন করিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালির কোনো অধিকার নাই। সেই ঔপনিবেশিক শাসনই বহাল রহিয়াছে। ব্রিটিশের বদলে পশ্চিম পাকিস্তানি প্রভুর আবির্ভাব ঘটিয়াছে। বাঙালির প্রকৃত মুক্তি ঘটে নাই। তাই তিনি দেশভাগের মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় গঠন করিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। কিছুকাল পরেই সংগঠনকে অসামপ্রদায়িক রূপ দিবার মানসে তাহার নাম হইতে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। স্মরণ করিয়া রাখা কর্তব্য যে, ছাত্রলীগই তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদল। বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করিয়াছিলেন পাকিস্তানিদের সহিত একত্রে থাকা সম্ভব নহে। ফলে বাঙালির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী বিরোধীদলের দরকার। তিনি তাই ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করিয়া একটি ক্ষীণধারার সৃষ্টি করিলেন যাহার পথ ধরিয়া সৃষ্ট শত ধারা যুক্ত হইয়া পরিশেষে বাংলাদেশ নামক একটি দেশ প্রতিষ্ঠিত হইল। ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মাত্র ১৭ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্মলাভ করিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকিয়াই মাত্র ২৮ বছর বয়সে দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হইলেন।
ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পিছনে তাঁহার কী বিশাল স্বপ্ন ছিল তাহার কিঞ্চিৎ উপস্থাপন করিব আজ। তোমরা অন্নদাশঙ্কর রায়ের নাম নিশ্চয়ই শুনিয়াছো। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হইয়া একটা প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসিয়াছিলেন। ২২শে ফেব্রুয়ারি তিনি বঙ্গভবনে বঙ্গবন্ধুর সহিত দেখা করিতে যান। অন্নদাশঙ্কর রায় একজন সফল আমলা ও সুবিখ্যাত লেখক। তিনি সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাহা প্রথমে ১৯৭৪ ও পরে ১৯৭৬ সালে বিস্তারিত প্রকাশিত হইয়াছিল। সেই সাক্ষাৎকারের একস্থানে অন্নদাশঙ্কর রায় লিখিয়াছেন, ‘আমি জানতে চাই বাংলাদেশের কল্পনা কবে প্রথম তাঁর মনে আসে। তিনি একটু হাসেন। বলেন, “১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে”।’ কিছু কি বুঝিতে পারিলে?
বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এই সংগঠনের তিনটি মূলনীতি বাছিয়া লইলেন- শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি। আমার গভীর সন্দেহ হইতেছে তোমরা আদৌ এই তিন মূলনীতির কথা শুনিয়াছ কিনা। কারণ মহান তিনটি নীতির একটিও আমি তোমাদের চরিত্রে দেখিতে পাইতেছিনা। প্রথম হইল শিক্ষা। আমার মনে হয় তোমাদের অধিকাংশই শিক্ষা ছাড়া বাদবাকি সকলকিছু করিয়া থাকো। ইহার পর হইল শান্তি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হইতেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে তোমরাই বড় অশান্তির কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছো। বাকি রহিল প্রগতি। এই শব্দটির সহিত তোমাদের আদৌ পরিচয় আছে কিনা তাহা লইয়া আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। তোমাদের সংগঠনের অধিকাংশের ধ্যানধারণার সহিত সামপ্রদায়িক ও মৌলবাদী দলগুলোর চিন্তা-চেতনার পার্থক্য নাই। কথাবার্তা, বেশভূষা ও আচরণে বুঝিবার উপায় নাই যে তাহারা একটি অসামপ্রদায়িক সংগঠনের কর্মী।
এখন যাহারা ছাত্রলীগ করিতেছো তাহাদের অনেকেই রেডিমেড ও ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগকে পাইয়াছো কাজেই বুঝিতে পারিতেছো না বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশকে রক্ষা করিবার ক্ষেত্রে এই সংগঠনের কী অসাধারণ, অবিস্মরণীয় অবদান আছে। ভাষা আন্দোলন হইতে শুরু করিয়া দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এই সংগঠনের ভূমিকা। জাতির পিতাকে হত্যার পর এই দেশেই বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা যাইতো না। জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া যাইতো না। খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে কী ঝুঁকি নিয়া ছাত্রলীগকে রাজনীতি করিতে হইত। জিয়া-এরশাদ- খালেদার পেটোয়াবাহিনী ও রগকাটা জামায়াত-শিবিরসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির হাতে কত হাজার হাজার ছাত্রলীগ, যুবলীগকর্মীকে প্রাণ দিতে হইয়াছে। কতজনকে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করিয়া নিতে হইয়াছে। আজ ক্ষমতার দাপটে যে ধরাকে সরা জ্ঞান করিতেছো তাহার খেসারত একদিন শোধ করিতে হইবে। তখন সহানুভূতির জন্যও কাহাকে খুঁজিয়া পাইবে না।
আমি বুঝিতে পারিয়াছি তোমাদিগকে বোঝাইবার শক্তি কাহারও নাই। তোমরা কোনো উপদেশ-পরামর্শ শুনিবার ধার ধারো না। সেই সাহসও আমার নাই। তাই কেবল দূর হইতে সকলের মঙ্গলের জন্য বলিতেছি, বাবারা ভালো থাকিও, ভালো রাখিও, দোয়া নিও।
লেখক : কবি, সাংবাদিক