কাজেম আলী মাস্টার : শিক্ষা আর সমাজ সেবায় অনন্য পথিকৃৎ

| সোমবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

কাজেম আলী মাস্টার (১৮৫২১৯২৬)। শিক্ষা, সমাজসেবা ও রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। স্বদেশী, অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন সহ সমাজ সেবামূলক নানা কাজে এগিয়ে আসা চট্টগ্রামের উৎসাহী তরুণদের মধ্যে কাজেম আলী মাস্টার ছিলেন অন্যতম। শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা এবং জনদরদের কারণে চট্টগ্রামবাসী তাকে শেখচাটগাম উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট তিনি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে জন্মগ্রহণ করেন। হুগলি থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কাজেম আলী সাতকানিয়া হাই স্কুলে শিক্ষকতা গ্রহণ করেন। এই জন্য তিনি কাজেম আলী মাস্টার নামে বেশি পরিচিত। তিনি সাতকানিয়া থেকে এসে পরবর্তীতে চাকমা রাজার কাছ থেকে ৬০ টাকায় কেনা জমিতে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে চিটাগাং মিডল ইংলিশ স্কুল নামে নিজের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। অচিরেই শিক্ষক হিসেবে চট্টগ্রামে তিনি সুনাম অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বাসীর উৎসাহ দেখে তিনি পিতার সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে চিটাগাং হাই ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে এই স্কুলের নাম পরিবর্তিত হয়ে কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ হয়। কাজেম আলীর দক্ষতা আর অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্কুলটি সাফল্য অর্জন করে, পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পরবর্তীকালে তিনি চট্টগ্রামে বেশ কিছু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা তৈরি ও পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক আদর্শে কাজেম আলী ছিলেন আপসহীন। অনলবর্ষী এই বক্তা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় চমৎকার বক্তৃতা দিতে পারতেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে চট্টগ্রামে কংগ্রেসখেলাফত কমিটির আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। এ সময় এক বিশাল জনসভায় তাঁকে ‘শেখচাটগাম’ উপাধি দেওয়া হয়। চট্টগ্রামে বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতা ও ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের আন্দোলনে মূল উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন তিনি। অসহযোগ আন্দোলনে দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সহকর্মী ও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। কাজেম আলী অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি, খাদেমুল ইসলাম সোসাইটি, খিলাফত কমিটিসহ নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন বহুকাল। দেশের মানুষের মুক্তিই ছিল তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন। তাই পরাধীনতার শৃঙ্খলে থেকে সরকার প্রদত্ত ‘খান বাহাদুর’ উপাধি বর্জন করেন তিনি। জনসেবায় নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য দু বার তাঁকে ‘কায়সারহিন্দ’ স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থীদের আবাসনে গণরুম কালচার বন্ধ হোক!