কাজী আবদুল ওদুদ : মুক্তবুদ্ধি চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ

| বৃহস্পতিবার , ১৯ মে, ২০২২ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

কাজী আবদুল ওদুদ। বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিশিষ্ট নাম। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সমাজে নবজাগরণ ঘটাতে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি ১৮৯৪ সালের ২৬ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার বাগমারায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯১৩ সালে মাসিক দশ টাকা বৃত্তি পেয়ে তিনি প্রবেশিকা পাশ করেন। ১৯১৭ সালে প্রেসিডেন্সী থেকে বি.এ এবং ১৯১৯ সালে রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। লেখালেখির শুরু ছাত্রজীবন থেকেই। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল উদার, অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী ও প্রগতি চেতনায় সমুজ্জ্বল। আর এর ওপর ভিত্তি করেই নিজের জীবন ও কর্ম ছিল প্রবহমান। তাঁর নেতৃত্বে ১৯২৬ সালে ঢাকায় গড়ে উঠেছিল সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’। ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামে খ্যাত প্রগতিশীল সাহিত্য আন্দোলন বিকাশের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও পশ্চাৎপদতা ছিন্ন করে যুক্তি আর মুক্ত বুদ্ধির বিকাশ ঘটানোই ছিল এই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য। এর বার্ষিক মুখপত্রের নাম ছিল ‘শিখা’। শিখার মূল বাণী ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। কাজী আবদুল ওদুদ কথাসাহিত্য, সমালোচনা, প্রবন্ধ ও অভিধান রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তাঁর সংকলন ও সম্পাদনায় ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘ব্যবহারিক শব্দকোষ’। অন্যান্য রচনার মধ্যে উপন্যাস ‘মীর পরিবার’, ছোটগল্প ‘নদীবক্ষে’, প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘শাশ্বত বঙ্গ’, ‘রবীন্দ্রকাব্য পাঠ’, ‘হিন্দু মুসলমানের বিরোধ’, ‘নজরুল প্রতিভা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ওদুদ রচিত জীবনীগ্রন্থ ‘হজরত মোহাম্মদ ও ইসলাম’, ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ’ এবং ‘কবিগুরু গ্যেটে’ বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ‘পথ ও বিপথ’ নামে একখানা নাটকও লিখেছিলেন তিনি। করেছেন পবিত্র কোরআনের বঙ্গানুবাদ। যুক্তিবাদী চিন্তা ও মননের বিকাশে আজীবন নিবেদিত এই মনীষী ১৯৭০ সালের ১৯ মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধশীতলপুরে ওভার ব্রীজ চাই