এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে আবার পর্যালোচনা

টাইগারপাসের পাহাড় রক্ষায় গণপূর্তকে পরিকল্পনা মন্ত্রীর চিঠি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসবে টিম

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

নগরের টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার অংশে পাহাড় রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। পাহাড় রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে লালখান বাজার-আমবাগান অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে আসছিল চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটি গত মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান পরিকল্পনা মন্ত্রী।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা মন্ত্রীর চিঠির প্রেক্ষিতে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সিডিএর নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে আবারো পর্যালোচনা করা হবে। এক্ষেত্রে শীঘ্রই একটি টিম প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসবে। একই সঙ্গে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন ও সিএমপিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সভা আয়োজন করার কথা রয়েছে।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায় লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি। ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সর্বশেষ গত জুনে প্রকল্পটির নতুন ডিজাইন চূড়ান্ত করার কথা জানায় সিডিএ।
নতুন ডিজাইন অনুযায়ী, বারিক বিল্ডিং থেকে আসা চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে দেওয়ানহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডে নির্মিত ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গিয়ে দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে এসে টাইগারপাস পার হয়ে বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ের রাস্তার সামনে পৌঁছুবে। এক্সপ্রেসওয়ে পাহাড়ের দিকে না গিয়ে রাস্তার মাঝখানে থাকবে। পিলারও রাস্তার মাঝখানে হবে। চসিক কার্যালয়ের রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছার পর চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ের দুই লেন ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির আগে রাস্তায় নেমে যাবে। বাকি দুই লেন রাস্তার মাঝখান দিয়ে গিয়ে ওয়াসা মোড়ে বিদ্যমান আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে।
নতুন ডিজাইন প্রকাশ হওয়ার পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনহ (চসিক) বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানানো হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প থেকে নান্দনিক সৌন্দর্যের টাইগারপাস অংশকে বাদ দিতে হবে। এ বিষয়ে চসিক তিন দফা পত্র পাঠায় সিডিএর কাছে। একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ। সংগঠনটি ২৪ আগস্ট সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি দেয়। সর্বশেষ ২৯ আগস্ট পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে টাইগারপাস পাহাড় রক্ষার দাবি জানায়। ওইদিন মন্ত্রীকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমরা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে টাইগারপাসের ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিকসহ এর নান্দনিক সৌন্দর্য রক্ষার যৌক্তিকতা উপস্থাপন করি মন্ত্রীর কাছে। অভিজ্ঞ প্রকৌশল ও স্থপতি টিমের মাধ্যমে বিকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। কীভাবে টাইগারপাস অংশে ট্রাফিক কন্ট্রোল হবে এবং সরকারের ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে তা তুলে ধরেছি। আমাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
সংগঠনের সদস্য সচিব জসীম চৌধুরী সবুজ আজাদীকে বলেন, মন্ত্রী প্রয়োজনে নিজে চট্টগ্রাম এসে সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
স্মারকলিপিতে পরিকল্পনা মন্ত্রীর কাছে পাহাড় রক্ষায় চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদের বিকল্প প্রস্তাবগুলো হচ্ছে, এলিভেটে এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্তটি টাইগারপাসের পরিবর্তে দেওয়ানহাট ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে নামানো। এতে টাইগারপাস রক্ষা হওয়ার পাশাপাশি ৭০০ কোটি টাকার মতো প্রকল্প ব্যয়ও সাশ্রয় হবে।
এছাড়া দেওয়ানহাট মোড় থেকে নৌ-বাহিনী সিনেমা হলের পাশ দিয়ে যে পুরনো রাস্তাটি আছে (দেওয়ানহাট ব্রিজ হওয়ার পর যেটি বন্ধ রাখা হয়েছে) তা আবার চালু করে সেখানে রেললাইনের উপর ওভারপাস তৈরি করে দেওয়া। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নেমে যানবাহন এই ওভারপাস হয়ে টাইগারপাস অতিক্রম করতে পারবে। বিদ্যমান রেলওয়ে ব্রিজটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা ভেঙে সেখানেও নতুন করে আরেকটি ওভারপাস তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়। যেটা দিয়ে আগ্রাবাদমুখী যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
এর আগে ২৬ আগস্ট টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার অংশে পাহাড় রক্ষায় বিকল্প বাইপাস সড়ক নির্মাণসহ সিডিএকে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল চসিক। তাদের প্রস্তাবনাগুলো ছিল, এক্সপ্রেসওয়েটি দেওয়ানহাট ফায়ার ব্রিগেড অফিস অতিক্রম করে দেওয়ানহাট মিটা গলির কাছে সুবিধাজনক স্থানে শেষ করা। এক্সপ্রেসওয়ের মিডিয়ান লালখান বাজার আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের মিডিয়ানের সাথে সংযুক্ত করে গ্রাউন্ড লেভেলে উভয় ফ্লাইওভারের সংযোগ দেওয়া। টাইগারপাস মোড়ের রাইট টার্ন ট্রাফিক এবং পলোগ্রাউন্ড রোড হতে আমবাগানমুখী যান চলাচলের সুবিধার্থে পলোগ্রাউন্ড রোড থেকে আমবাগান রেল পুলিশের অফিসের সামনের সড়কের সাথে দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে রেললাইনের উত্তর পাশের খালি জায়গা দিয়ে বিকল্প বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা। দেওয়ানহাট ওভারব্রিজেরর সমপ্রসারণ করা। পাহাড় যথাযথ সংরক্ষণ করে লালখান বাজার হতে টাইগারপাস অংশের সড়কপথের সুবিধামতো সমপ্রসারণ করা। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে ১৮ হাজার ইয়াবা সহ গ্রেফতার ২
পরবর্তী নিবন্ধরপ্তানি বাণিজ্যে গতি বাড়াবে অনলাইনে ইজিএম দাখিল