একাদশে ভর্তিতে আবেদন ১০ আগস্ট থেকে, ক্লাস শুরু ৮ অক্টোবর

নীতিমালা চূড়ান্তকরণে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক আজ

রতন বড়ুয়া | সোমবার , ৩১ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত শুক্রবার (২৮ জুলাই)। ফল প্রকাশের পরপরই কলেজের একাদশ শ্রেণির ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে এরইমাঝে একাদশে ভর্তি কার্যক্রমের সম্ভাব্য সময়সূচিসহ খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই খসড়া নীতিমালা চূড়ান্তকরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আজ (৩১ জুলাই) বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খসড়া অনুযায়ীআগামী ১০ আগস্ট থেকে একাদশে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদন শুরু হবে। চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। আর প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিতদের ফল প্রকাশ করা হবে ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টায়। ২য় ও ৩য় পর্যায়ের ফল প্রকাশের পর ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে ৮ অক্টোবর থেকে কলেজগুলোতে ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। কলেজ ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্তকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার আজাদীকে বলেন, সোমবার (আজ) এ সংক্রান্ত বৈঠক অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে ভর্তি কার্যক্রমের খসড়াটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এই সময়সূচিকে খসড়া (সম্ভাব্য) হিসেবেই গণ্য করতে হবে বলে জানান শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান।

অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় ধরনের কোনও জটিলতা (ভুলত্রুটি) না থাকলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের খসড়াটিই মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে থাকে মন্ত্রণালয়ের সভায়। সে হিসেবে খসড়ার সম্ভাব্য এ সময়সূচিই চূড়ান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

খসড়া নীতিমালার তথ্য অনুযায়ী, ১০ আগস্ট থেকে একাদশে ভর্তিতে অনলাইন আবেদন শুরু হয়ে চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদেরও একই সময়ে (১০ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট) আবেদন করতে হবে। গত কয়েকবছরের মতো এবারও কেবল অনলাইনেই (ওয়েবসাইটের মাধ্যমে) আবেদন করা যাবে। একাদশে ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট (www.xiclassadmission.gov.bd) –এ আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ম ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। আবেদন ফি বাবদ ১৫০ টাকা দিতে হবে প্রতি শিক্ষার্থীকে। টেলিটক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ ফি পরিশোধ করতে হবে। কেবল পুনঃনিরীক্ষায় ফল পরিবর্তন হওয়া শিক্ষার্থীরা ৩১ আগস্ট নতুন করে আবেদনের সুযোগ পাবে। আর ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আবেদনে পছন্দক্রম পরিবর্তনের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। যাচাইবাছাই শেষে ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় প্রথম দফায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে। এই সময়ে ভর্তি নিশ্চায়ন না করলে মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ওই (মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হওয়া) শিক্ষার্থীকে পুনরায় ফি দিয়ে ২য় পর্যায়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে।

প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিতদের ভর্তি নিশ্চায়ন শেষে ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত ২য় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ২য় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ শেষে ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় প্রথম পর্যায়ের মাইগ্রেশনের ফল ও ২য় পর্যায়ে মনোনীতদের ফল প্রকাশ করা হবে।

২য় পর্যায়ে মনোনীতদের ১৭ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার মধ্যে ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে। এই সময়ে ভর্তি নিশ্চায়ন না করলে মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ওই (মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হওয়া) শিক্ষার্থীকে পুনরায় ফি দিয়ে ৩য় পর্যায়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে। ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর ৩য় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে।

আবেদন গ্রহণ শেষে ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় ২য় পর্যায়ের মাইগ্রেশনের ফল ও ৩য় পর্যায়ে মনোনীতদের ফল প্রকাশ করা হবে। ৩য় পর্যায়ে মনোনীতদের ২৪ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে। এই সময়ে ভর্তি নিশ্চায়ন না করলে মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। চূড়ান্তভাবে মনোনীত শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম চলবে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। ভর্তি কার্যক্রম শেষে ৮ অক্টোবর থেকে একাদশে ক্লাস শুরুর কথা বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠক পরবর্তী একাদশে ভর্তিতে আবেদনের সময়সিডিউল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, নির্দেশিকা ও ফি প্রদানের পদ্ধতি ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট (www.xiclassadmission.gov.bd) –এর বাম পাশে পাওয়া যাবে বলে বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আবেদনের ক্ষেত্রে যা বিবেচনায় নিতে হবে : আবেদনের ক্ষেত্রে কলেজের পড়ালেখার মানপরিবেশ, বাসা থেকে দূরত্ব এবং মাসিক বেতনসহ যাবতীয় খরচের বিষয়টি যাচাইবাছাই করে কলেজের পছন্দক্রম ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। দোকানের কম্পিউটার অপারেটরদের ইচ্ছে অনুযায়ী কলেজের পছন্দক্রম না দিতে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও কোটার স্বপক্ষে যথাযথ কাগজপত্র থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেই কেবল কোটায় আবেদন করার পরামর্শ দিয়ে কলেজ পরিদর্শক বলেন, দেখা গেলো, কেউ একজন কোটায় আবেদন করেছে। আবেদন করায় কোটায় ভর্তির জন্য ওই শিক্ষার্থী মনোনীত হলেও যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি করাবে না। আবার কোটায় আবেদন করায় মেধা তালিকায়ও তার নাম আসবে না। এতে করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ভর্তি ঘিরে সংশয় দেখা দিবে। তাই আবেদনের ক্ষেত্রে যাবতীয় বিষয় যাচাইবাছাই করে তবেই আবেদন করতে হবে।

পছন্দক্রমে সর্বোচ্চ দশ কলেজ রেখেই আবেদনের পরামর্শ :

একাদশে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ম ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। সুযোগ থাকায় সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। অনেক শিক্ষার্থী অতি আত্মবিশ্বাসের জোরে মাত্র কয়েকটি বা ৫টি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করে। কিন্তু দেখা গেল, তার প্রাপ্ত নম্বরে ওই ৫টি কলেজের কোনোটিতেই সে ভর্তির সুযোগ পেল না। এছাড়া পছন্দক্রমে আর কলেজ না থাকায় পরবর্তী তালিকাতেও তার আসার সুযোগ থাকে না। এতে করে জিপিএ৫ পেয়েও কিছু শিক্ষার্থীর ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে সুযোগ থাকায় সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করলে ভর্তি ঘিরে এ ধরনের অনিশ্চয়তা কমে যায়। তাই সব শিক্ষার্থীরই সর্বোচ্চ দশটি কলেজে পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করার জোরালো পরামর্শ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের।

সতর্ক হতে হবে মোবাইল নম্বর প্রদানে : আবেদনের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কন্টাক্ট নম্বর হিসেবে একটি মোবাইল নম্বর দিতে হয়। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলছেন, আবেদনের সময় প্রদত্ত এই মোবাইল নম্বরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আবেদন পরবর্তী ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এই মোবাইল নম্বরেই পাঠানো হবে। কন্টাক্ট নম্বর হিসেবে প্রদত্ত এই মোবাইল নম্বর অবশ্যই রেজিস্ট্রেশনকৃত (বায়োমেট্রিক) হতে হবে। যাতে কোনো কারণে মোবাইল হারিয়ে গেলেও সিমটি পুনরায় উত্তোলন করা যায়। আর কন্টাক্ট নম্বর হিসেবে একই মোবাইল নম্বর কোনো ভাবেই একাধিক আবেদনে ব্যবহার করা যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণ্ডগোল কেন হলো না, বিএনপি নেতাদের ওপর চটেছে তারেক
পরবর্তী নিবন্ধ৬ আগস্ট গণভবনে বর্ধিত সভা