উপেক্ষার এক হাসপাতাল

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চর্ম রোগের চিকিৎসায় এক সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল আগ্রাবাদ আমেরিকান হাসপাতালের। এখন অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে এটি। এই হাসপাতালটিকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার একটি বড় ভরসার জায়গায় পরিণত করার সুযোগ থাকলেও তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এখনো এটি চলছে প্রতিষ্ঠাকালের জনবল কাঠামোতে। এতে চিকিৎসার জন্য আসা সাধারণ মানুষ কাঠখড় পোড়ালেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসতালটিকে স্পেশালাইজড কাম জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তরের দাবিতে আজ সকালে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সোচ্চার নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বন্দর সংশ্লিষ্ট নাবিকদের চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য ১৯৫৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহায়তায় নগরীর আগ্রাবাদে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে শুধুমাত্র বন্দর সংশ্লিষ্টদের চিকিৎসা দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রথমে বিদেশি চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালিত হতো, সেজন্য এটি আমেরিকান হাসপাতাল নামে পরিচিতি লাভ করে। শুরু থেকে চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালটি ভাল ভূমিকা রেখে আসছিল। কিন্তু দিনে দিনে হাসপাতালটির সার্বিক অবস্থা নাজুক আকার ধারণ করে। নগরী ও জেলার চর্মরোগীরা প্রতিদিন ভোর থেকে হাসপাতালটির অঙ্গনে ভিড় করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রোগী দেখা সম্পন্ন করতে হয় হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের। ‘কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামের এই হাসপাতালটির অবকাঠামোগত সংকটের পাশাপাশি চিকিৎসক সংকটও প্রকট। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন হাসপাতালটিতে মাত্র ৫জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। যাদের মধ্যে একজন দুইজন অসুস্থ বা ছুটিছাঁটাতে গেলে চিকিৎসক সংকট আরো প্রকট হয়ে ওঠে। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভোর থেকে শত শত মানুষ লাইন ধরে টিকেট সংগ্রহ করেন। সকাল ৮টা থেকে চিকিৎসা শুরু হলেও ভোর থেকে লাইন ধরে থাকেন বহু মানুষ। বেলা একটা পর্যন্ত টোকেন দেয়া হয়। তবে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায় দুইটা আড়াইটা পর্যন্ত। সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে, একজন ডাক্তারকে গড়ে শতাধিক রোগী দেখতে হয়।

স্বাভাবিকভাবেই যা একটি অসম্ভব ব্যাপার। এতে করে একজন রোগী গড়ে কয়েক সেকেন্ড সময় পান। নানা ভোগান্তি সয়ে নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চর্মরোগীদের চিকিৎসাও যথাযথভাবে হয় না। ৫ টাকার টিকিটে ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি মজুতে থাকলে ফ্রি ওষুধও দেয়া হয়। কিছু কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষারও সুবিধা রয়েছে। তবে সব অবকাঠামোগত সংকটের পাশাপাশি জনবল সংকট হাসপাতালটিকে এক নাজুক অবস্থায় ফেলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ১৯৫৩ সালের অর্গানোগ্রাম

ও অবকাঠামোতেই হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে। তাও পুরোপুরি নেই। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী হাসপাতালটি মোট ২৩ জন স্টাফ থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১৫জন। কয়েকবছর ধরে বাকি পদগুলো খালি। হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩টি মেশিন রয়েছে। সেগুলো হলো এসএসএফ, ইউরিনারি, সিবিসি। এসএসএফ করা হয় ৫০ টাকায়, ইউরিনারি পরীক্ষা ২০ টাকায়, সিবিসি ২০০ টাকায়।

চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (আমেরিকান হাসপাতাল)-কে স্পেশালাইজড কাম জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করলে চট্টগ্রামের চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারতো বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এটির উন্নয়নে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে। আজ সকাল ১১টায় আগ্রাবাদস্থ কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (আমেরিকান হাসপাতাল) এর সম্মুখে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। মানববন্ধনে প্রধান অতিথি নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি জানিয়েছেন, প্রায় সাড়ে তিন লাখ বর্গফুট আয়তনের জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের বহু এলাকা খালি পড়ে আছে। যেখানে অনায়াসে একটি জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করলে এলাকার মানুষের বহু বেশি উপকৃত হবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্দোলনে বাধা নেই, তবে নাশকতায় ছাড় নেই
পরবর্তী নিবন্ধনির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে রং মিস্ত্রির মৃত্যু