উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবার অগ্নিকাণ্ড

তিন ঘণ্টার আগুনে পুড়ল ১২শ বসতি, আহত অর্ধশত

উখিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

উখিয়ার ১৬ নম্বর শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তিন ঘণ্টার আগুনে পুড়ে গেছে ১২ শতাধিক বসতি। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গতকাল রোববার বিকেল ৫টার দিকে লাগা আগুনে বসতির পাশাপাশি অন্যান্য স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এলপি গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। ৮ এপিবিএন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন বলেন, ক্যাম্প-১৬ এর বি/১ ব্লকের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলী (৩৫), ইলিয়াস মাঝি ও আবু ছৈয়দ মাঝির ঘরের গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পাশের বি ও সি ব্লকে ছড়িয়ে পড়ে।
ক্যাম্পে আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. সিহাব কায়সার খান ফোর্স, স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়ে প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টা চালান বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে কাঁটাতারের বেড়ায় আটকা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের আর্তচিৎকারে হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কাঁটাতারের বেড়া টপকে অগ্নিনির্বাপক সদস্যদের আগুন নিয়ন্ত্রণে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
স্থানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতিসংঘের একাধিক সংস্থাসহ শতাধিক দেশি-বিদেশি এনজিও রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। কিন্তু বিগত চার বছরেও নিরাপদ আবাসন, সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন, জলাধারের মতো প্রয়োজনীয় তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারায় এ ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হয়।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় বলে উখিয়া ফায়ার স্টেশন সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিক তথ্যে অন্তত ১২ শতাধিক রোহিঙ্গার বসতঘর পুড়ে যাওয়ার কথা জানান এপিবিএন কর্মকর্তা। অগ্নিকাণ্ডে নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছে।
উখিয়া ফায়ার স্টেশনের দায়িত্বরত মো. এনামুল হক রাত ৮টায় বলেন, সবাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
তিনি বলেন, উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে ৪টি, কঙবাজার স্টেশন থেকে ২টি ও ক্যাম্পের স্যাটেলাইট স্টেশন থেকে ১টিসহ মোট ৭টি ইউনিট ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছে। ক্যাম্প থেকে পুরো ইউনিট না ফেরা পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে কারো নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি উখিয়ার বর্ধিত-২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্মিত আইওএমের ২০ বেডের একটি আইসোলেশন হাসপাতাল আগুনে পুড়ে যায়। গত বছরের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীর ৩টি ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৫ জনের মতো রোহিঙ্গা নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছিল। ওই সময় অন্তত ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বসতিসহ বেশ কিছু স্থাপনা পুড়ে গিয়েছিল।
বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন বলেন, রোহিঙ্গাদের ঘরের জিনিসপত্রের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার মধ্যে দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থার কার্যালয়ও রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরুদ্ধদ্বার বৈঠক সম্মেলনসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা
পরবর্তী নিবন্ধএবার নিজের করা মামলায় গ্রেপ্তার বাবুল আক্তার