ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের ৫৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

দেশের সংবাদপত্র শিল্পের অন্যতম অগ্রদূত, চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃৎ দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের আজ ৫৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬২ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। এ উপলক্ষে স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতি আজ সকাল সাড়ে দশটায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেমিনারের আয়োজন করেছে। ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন এই মনীষীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
চট্টগ্রামের রাউজানের অভিজাত পরিবারের সন্তান আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার এখানকার লেখাপড়া শেষ করে ভারতের শিবপুর ইঞ্জিনিয়ার কলেজে পড়তে যান। ওখান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার। ওই সময় চট্টগ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হয়েছিল। তরুণ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি চাকরিতে যোগ দেন এবং চট্টগ্রামে বিদ্যুতের উন্ন্‌য়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সরকারি চাকরিতে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি সরকারি বঞ্চনা উনাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। মাটি ও মানুষের নানা দুর্গতি এবং বিড়ম্বনায় তাঁর মন কেঁদে ওঠে। সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তৎকালীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অনেক বড় পদে তাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি তা গ্রহণ না করে চাকরি ছেড়ে দেন। আজ থেকে ৬০ বছর আগে এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি কাজ শুরু করেন। চট্টগ্রামের শিক্ষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার মানসে তিনি কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেস, কোহিনুর লাইব্রেরী এবং কোহিনুর পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। কোহিনুর নামে তৎকালে তার পরিবারে কোন সদস্য না থাকলেও বিশ্বখ্যাত সেই হীরকখণ্ডের নামে তিনি তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামকরণ করেন। চট্টগ্রামকে আলোকিত করার জন্য তিনি বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে যেমন ভূমিকা রেখেছিলেন তেমনি আলোকিত মানুষ গড়ার জন্যই তিনি কোহিনুর প্রেস, কোহিনুর লাইব্রেরী এবং কোহিনুর পত্রিকা প্রকাশ করেন। আলোকিত মানুষ গড়ার সেই প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে একজন সফল এবং প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ারের নিশ্চিত ভবিষ্যতকে দূরে ঠেলে দিয়ে তিনি ৬০ বছর আগেকার সেই সমাজ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার মাঝে পত্রিকা প্রকাশনার অনিশ্চয়তায় পা বাড়িয়েছিলেন। তৎকালীন সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থায় পত্রিকা প্রকাশনা যে কত কঠিন কাজ ছিল তা বর্তমানে বসে অনুধাবন করা মোটেই সহজ বিষয় নয়। মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার চট্টগ্রামের মানুষের জন্য সেই কঠিন কাজটি বেছে নিয়েছিলেন। অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা নিয়ে ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি প্রকাশ করেছিলেন দৈনিক আজাদী।
কেবল পত্রিকা প্রকাশ, লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা, ছাপাখানা স্থাপন করে তিনি ক্ষান্ত হননি। এ অঞ্চলের কবি, সাহিত্যিক ও লেখক তৈরিতেও বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের প্রত্যক্ষ সহায়তা পেয়ে অনেকেই পরবর্তীতে কবি এবং সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। একুশের প্রথম কবিতা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ প্রকাশনার অভিযোগে কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেস বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে নানা ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছিল কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেসের মালিক এবং কর্মচারীদের।
উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত অলিয়ে কেরাম হযরতুল আল্লামা ছৈয়দ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রঃ) এর প্রধান খলিফা আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সৎ এবং ধর্মভীরু ছিলেন। মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ মমত্ববোধ। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি মানুষকে ভালোবেসে গেছেন। ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের এই কৃতী পুরুষ ইন্তেকাল করেন। আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীর আন্দরকিল্লায় ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক চত্বর প্রতিষ্ঠা করেছে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন গড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের নামে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে লাখ পার হল নমুনা পরীক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬