আমার ছোটবেলার খেলাগুলো

সুলতানা কাজী | সোমবার , ২৪ মে, ২০২১ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

গ্রামীণ পরিবেশে কাটানো দুরন্ত ছোটবেলা আমার! গাছে চড়া থেকে শুরু করে খালে-বিলে মাছ ধরাও বাদ নেই তাতে। মনে পড়ে সেই মধুর দিনের কথা! সেই খেলা! পুতুল বানানো, পুতুলের বিয়ে দেয়া, সব আজ ধূসর ফিতেয় বাঙ বন্দী। আমার দুরন্তপনা, শৈশব মধুরতা, মায়াময় সুখস্মৃতির সবই যেন ঐ বাঙে বন্দী হয়ে আছে।
খড়ের স্তুুপে দলবেঁধে অকারণ হাসি তামাশায় কেটে যেতো সময়গুলো। শীতের সময় পাড়ার ছেলে-মেয়েদের খড়কুটো পুড়িয়ে আগুন পোহানো ছিল অন্য রকম আনন্দের বিষয়। অনেক ধরনের খেলাই খেলেছি আমরা। যেমন : হা-ডু-ডু, চাকা খেলা, ওপেন্টি বায়স্কোপ, এক্কাদোক্কা, কানামাছি, ইচিংবিচিং, দড়ি খেলা, মার্বেল, ডাঙ্গুলি, বৌছি, ঘুড়ি ওড়ানো, গুটি খেলা, শিম বিচির দানা দিয়ে, দাড়িয়াবান্ধা, লাটিম, গোল্লাছুট, লুকোচুরি, কাবাডি, কড়ি খেলা, মোরগের লড়াইসহ আরো কত নাম না জানা খেলা! আমাদের জীবনের একটা রঙিন অধ্যায় হলো শৈশব। খুব ইচ্ছে করছে সেইসব দিনগুলো ফিরে পেতে। শৈশব যেন আজো আমায় ডাকে! বলে, আয়.. ফিরে আয়! সোঁদা মাটির ঘ্রাণ। গাছের সাথে মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা দোলনা। “কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।”…আশা করি আমার মতো অনেকের মনে আছে নিশ্চয়ই।
আমি মাটি, কাঠ, কিংবা কাপড় দিয়ে মানুষের আদলে পুতুল বানাতাম। পুতুল খেলার মধ্যে পুরো সংসারের একটা আদল ফুটে ওঠতো। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো, একজনের পুতুলের সাথে আরেকজনের পুতুলের বিয়ে দেয়া। ভাঙ্গা মাটির হাঁড়ি বা ভাঙ্গা কলসির টুকরোকে চাড়া বা গুটি বানিয়ে বাড়ির উঠানে অথবা খোলা জায়গায় আয়তকার দাগ কেটে খেলা হতো এক্কাদোক্কা। বেশ সহজ এই খেলাটা একা একাও খেলা যেতো।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ফাঁকা জায়গা সংকুচিত হয়ে যাওয়া, স্মার্টফোনে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কারণে গ্রামীণ খেলাগুলো আজ বিলুপ্ত প্রায়। এসব খেলাধুলা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে এমন শিশু- কিশোরের খোঁজ পাওয়া দুষ্কর। শুনলেও শুনেছে তারা দাদা- দাদী বা বাবা- মার কাছে গল্পের ছলে। গ্রামীণ এ খেলাগুলো তাদের কাছে হারানো ঐতিহ্যের সামিল। অথচ এসব খেলাগুলোর উপকারিতা জানলে অবাক না হওয়ার উপায় নেই।
কালের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাণের খেলাগুলো। নতুন প্রজন্ম শিখছে কৃত্রিমতার প্রেম! গ্রামীণ জীবনকে পথের বাঁকে ফেলে শহুরে জীবনের সাথে যতই খাপ খাওয়াই ততই ফিরে যাই আমার শেকড়ে। আমার শৈশব, কৈশোর,…. আমার কাছে পরম আদরের। প্রকৃতির কোলে বাধাহীন ছুটে বেড়ানোর দিনগুলোতে জমে আছে কত স্মৃতি!
চার দেয়ালের ভেতর বন্দী এখন শিশুরা। টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক আর গেমস্‌ রীতিমতো ভূতের ওঝা হয়ে চেপেছে শিশুদের মনে। আমরা শিশুদের বায়না মিটাচ্ছি কৃত্রিম আয়োজনে। আমাদের প্রজন্মকে গ্রামীণ খেলাগুলো শেখানোর দায়িত্ব আমাদের। আমরা এই নির্ভেজাল আনন্দের খেলাগুলো হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে প্রজন্মদের সুরক্ষিত করি। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খেলাগুলো বাঁচানোর তাগিদে আলাদা কোনো সংগঠনের বিকল্প নেই। আকাশের তারাদের মতো আমরা যেন আমাদের খেলাগুলো দূরে চলে যেতে না দিই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিন শেষে
পরবর্তী নিবন্ধকরোনাকালীন সামাজিক দায়বদ্ধতায় বিকাশ