আজাদীর জন্য ভালোবাসা

মর্জিনা আখতার

| সোমবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

‘আমার সকাল বেলার ভালোবাসা’ আমার প্রিয় পত্রিকা দৈনিক আজাদী। একদিন সকালে পত্রিকাটা মেলে ধরতেই মনটা আনন্দে ঝলমল করে উঠলো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় একটি বিজ্ঞাপন দেখে- ‘আয় গেইয়ি/ নয়া তাজা থ্রি স্টার / প্রতি প্যাকেডত /বেশী কাপ চা’। এ আঞ্চলিক উপস্থাপনা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গৌরব। এ ভাষায় নানা খবরের শিরোনাম পাঠক মনে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। আমাদের আঞ্চলিকতা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও বিশ্বনন্দিত। দৈনিক আজাদী দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা। ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ শত ঝুঁকি মাথায় নিয়ে প্রথম ছাপানোর কৃতিত্ব অর্জন করেছে দৈনিক আজাদী। অসংখ্য কবি, লেখক ও সাহিত্যিক সৃষ্টির প্রতিষ্ঠান ও সাহিত্য চর্চার উল্লেখযোগ্য প্রাণকেন্দ্র দৈনিক আজাদী। লেখার জগতে আমারও প্রথম প্রবেশ আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ভাইয়ার সময়ে আগামীদের আসরে সদস্য হওয়ার মাধ্যমে। আমার সদস্য নম্বর ছিল ২১৩৪। প্রথম লেখা ছাপানো হয়েছিল শীত সংখ্যায় ‘শীতের বুড়ি’ শিরোনামে ছড়া। সেই কিশোর বয়সে পত্রিকায় নিজের ছাপানো লেখা দেখে আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম। সততা, সাহস, নিষ্ঠা, আস্থা ও আন্তরিকতাকে সাথী করে অদম্য গতিতে এগিয়ে ৬৩ বছরে পদার্পণ করেছে দৈনিক আজাদী। এটি একটি অবিস্মরণীয় বিজয়। চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোাগও। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি ধসে মানুষের মৃত্যু এবং অন্যান্য নানামুখী সমস্যা নিয়ে আজাদী চিরকাল সোচ্চার। এছাড়া সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়াঙ্গন, শিক্ষাঙ্গন সব বিষয়ে অগ্রণী। বৈশাখী মেলা, জব্বাইয্যার বলীখেলা (জব্বারের বলীখেলা), কোরবানির বাজার, বইমেলা, স্বাধীনতার মেলা, বিজয় মেলা, বাণিজ্য মেলা, বিশেষ দিবস, জাতীয় দিবস ইত্যাদি বিষয়ের রকমারি খবরে, রঙ্গিন চিত্রে শোভিত থাকে আজাদীর পাতা। বৈশ্বিক মহামারীতেও হেরে যায়নি দৈনিক আজাদী। সচেতনতার সাথে চলমান ছিল এর প্রকাশনা। ছিল স্বাস্থ্যসংবাদ, ‘করোনা’ বিষয়ক নানারকম পরামর্শ ও নির্দেশনা। মহাত্মা মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার দৈনিক আজাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নিজের হাতে সকল বাধা-বিঘ্ন সরিয়ে এগিয়ে গেছেন অভীষ্ট লক্ষ্যে। এরপর তাঁর জামাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের সম্পাদনায় এই পত্রিকা দুর্বার গতিতে এগিয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পরে আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের সুযোগ্য পুত্র জনাব এম এ মালেকের সম্পাদনায় এবং পরিচালনা সম্পাদক জনাব ওয়াহিদ মালেকের সুচারু পরিচালনায় দৈনিক আজাদী এখন বিশ্বনন্দিত ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরমধ্যে উত্তরণ ঘটেছে তথ্য ও প্রযুক্তির। ব্যবস্থাপনা হয়েছে আধুনিক। আজাদীর সফলতা মানে এর সাথে যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং বর্তমানে যাঁরা আছেন তাঁদের সকলের সফলতা। দৈনিক আজাদী আজকের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সম্ভারে সজ্জিত অত্যন্ত মানসম্পন্ন শোভিত ঝকঝকে এক অনন্য পত্রিকা, যাকে দেখলেই খুব আপন মনে হয় বুকে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করে। আমার আশৈশব চির চেনা এ পত্রিকাকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসার আজাদী
পরবর্তী নিবন্ধদৈনিক আজাদী চট্টগ্রামের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক