অধ্যাপক কবীর চৌধুরী: এক মূল্যবোধের নাম

| রবিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

কবীর চৌধুরী – এদেশের প্রথিতযশা মনীষীদের মধ্যে অনন্য একজন। একাধারে তিনি ছিলেন লেখক, শিক্ষক, সংগঠক, অনুবাদক এবং প্রগতিশীল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিবেদিত এক শুদ্ধচারী ব্যক্তিত্ব। মুক্তবুদ্ধি, উদারচিন্তা ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক চর্চায় নিবেদিতপ্রাণ কবীর চৌধুরীর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
কবীর চৌধুরীর জন্ম ১৯২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পিতা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরীর কর্মক্ষেত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। খান বাহাদুর আবদুল হালিম ছিলেন ব্রিটিশ আমলের বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা। চৌদ্দ ভাইবোনের মধ্যে কবীর ছিলেন অগ্রজ। ডাক নাম মানিক। ভাইবোনদের প্রায় সকলেই কৃতী। এঁদের মধ্যে মুনীর চৌধুরী ও ফেরদৌসী মজুমদারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য। কবীর চৌধুরীর শিক্ষাজীবনের শুরু বাড়িতে। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন পিরোজপুর গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে। পরবর্তীসময়ে ঢাকা কলেজিয়েট থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন কৃতিত্বের সাথে। ছাত্রজীবনে বরাবরই মেধাবী কবীর চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স সহ এম.এ করে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ছুটিজনিত শূন্যপদে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীসময়ে দীর্ঘ দশ বছর কবীর চৌধুরী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারের বেসামরিক সরবরাহ বিভাগে জেলা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা কলেজের অধ্যাপক, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ, জনশিক্ষা দপ্তরের সহকারী পরিচালক, জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরোর সহকারী পরিচালক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সিনিয়র ইনস্ট্রাকটর, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ এবং বাংলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। কবীর চৌধুরী জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাদৃত হয়েছিলেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির সুদীর্ঘ যাত্রাপথ কবীর চৌধুরী বিচরণ করেছেন মূল্যবোধসম্পন্ন বিবেক, মানবমুখী কর্মপ্রেরণা আর অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে। শ্রেণির ঊর্ধ্বে সর্ব মানবের মর্যাদায় আস্থাবান এই শিল্পীসত্তা সমাজকে অবক্ষয়ী মূল্যবোধের নিগঢ় থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে ছিলেন সদা সচেষ্ট। সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অনুবাদ, নাটক, চিত্রকলা, রাজনীতি প্রভৃতি বিচিত্রমুখী বিষয় নিয়ে কবীর চৌধুরী প্রচুর লিখেছেন। সকল অন্যায় আর অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। তাঁর শাণিত কলম ধারণ করেছে কালের প্রবাহকে। সব মিলিয়ে কবীর চৌধুরী ছিলেন মূল্যবোধসম্পন্ন এক বিবেকের নাম। ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর কবীর চৌধুরী প্রয়াত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধঘুম হোক যথা তথা মন হোক ভালো